পাতা:প্রায়শ্চিত্ত ১৯২০ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミo প্রায়শ্চিত্ত আমিই মহারাজকে বলেছিলেম। প্রতাপাদিত্য। সে তো বলেছিলে। তার ফল কী হল দেখো-না । আজি দু বৎসরের খাজনা বাকি। সকল মহল থেকে টাকা এল, আর ওখান থেকে কী আদায় হল ? মন্ত্রী। আজ্ঞে, আশীৰ্বাদ । তেমন সব বজাত প্রজাও যুবরাজের পায়ের গোলাম হয়ে গেছে। টাকার চেয়ে কি তার দাম কম ? সেই যুবরাজের কাছ থেকে আপনি মাধবপুরের ভার কেড়ে নিলেন । সমস্তই উলটে গেল । এর চেয়ে তাকে না পাঠানোই ভালো ছিল। সেখানকার প্রজার তো হন্তে কুকুরের মতো খেপে রয়েছে— তার পরে আবার যদি এই কথাটা প্রকাশ হয় তা হলে কী হয় বলা যায় না। রাজকার্যে ছোটোদেরও অবজ্ঞা করতে নেই মহারাজ ! অসহ্য হলেই ছোটোরা জোট বাধে, জোট বাধলেই ছোটোরা বড়ো হয়ে ওঠে । প্রতাপাদিত্য। সেই ধনঞ্জয় বৈরাগী তো মাধবপুরে থাকে ? মন্ত্রী। আজ্ঞে হা । প্রতাপাদিত্য । সেই বেটাই যত নষ্টের গোড়া। ধর্মের ভেক ধরে সেই তো যত প্রজাকে নাচিয়ে তোলে। সেই তো প্রজাদের পরামর্শ দিয়ে খাজনা বন্ধ করিয়েছে। উদয়কে বলেছিলুম যেমন করে হোক তাকে আচ্ছা করে শাসন করে দিতে। কিন্তু উদয়কে জান তো ? এ দিকে তার না আছে তেজ, না আছে পৌরুষ, কিন্তু একগুঁয়েমির অস্ত নেই। ধনঞ্জয়কে শাসন দূরে থাকৃ, তাকে আস্পর্ধ দিয়ে বাড়িয়ে তুলেছে। এবারে তার কষ্ঠিমৃদ্ধ কণ্ঠ চেপে ধরতে হচ্ছে, তার পরে দেখা যাবে তোমার মাধবপুরের প্রজাদের কতবড়ো বুকের পাট । আর দেখো, লোকজন আজই সব ঠিক করে রাখো— খবরটা পাবা মাত্রই রায়গড়ে গিয়ে বসতে হবে । সেইখানেই গ্রাদ্ধশাস্তি করব— আমি ছাড়া উত্তরাধিকারী আর তো কাউকে দেখি নে ।