পাতা:প্রায়শ্চিত্ত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রায়শ্চিত্ত Ꮌ ☾ বসন্তরায়। বাহব, বাহবা! কবি কী কথাই বলেছেন! সাহেব, যে দুটো বয়েত আজ বললে ও তো আমাকে লিখে দিতে হবে। আচ্ছা খাসাহেব, তোমার তো বেশ মজবুত শরীর, তুমি তো ফৌজের সিপাহি হতে পার। পাঠান। হজুরের মেহেরবানি হলেই পারি। আমার বাপ-পিতামহ সকলেই তলোয়ার হাতে মরেছেন । কবি বলেন— বসন্তরায় । (হাসিয়া ) কবি যাই বলুন, আমার কাজ যদি নাও তবে তলোয়ার হাতে নিয়ে মরার শখ মিটতে পারে, কিন্তু সে তলোয়ার খাপ থেকে খোলবার সুযোগ হবে না । প্রজারা শাস্তিতে আছে— ভগবান করুন, আর লড়াইয়ের দরকার না হয়। বুড়ো হয়েছি, তলোয়ার ছেড়েছি, এখন তার বদলে আর-একজন আমার পাণিগ্রহণ করেছে। [ সেতারে ঝংকার পাঠান। ( ঘাড় নাড়িয়া ) হায় হায়, এমন অস্ত্র কি আছে ! একটি বয়েত আছে— তলোয়ারে শক্রকে জয় করা যায় কিন্তু সংগীতে শক্রকে মিত্র করা যায়। বসন্তরায় । ( উৎসাহে উঠিয়া দাড়াইয়া ) কী বললে, খাসাহেব ! সংগীতে শক্রকে মিত্র করা যায় ! কী চমৎকার! তলোয়ার যে এমন ভয়ানক জিনিস, তাতেও শক্রর শক্রত্ব নাশ করা যায় না । কেমন করে বলব নাশ করা যায় ? রোগীকে বধ করে রোগ আরোগ্য করা, সে কেমনতরো আরোগ্য ? কিন্তু সংগীত যে এমন মৃদু জিনিস, তাতে শত্রু নাশ না করেও শত্ৰুত্ব নাশ করা যায়। এ কি সাধারণ কবিত্বের কথা ! বাঃ, কী তারিফ ! খাসাহেব, তোমাকে একবার রায়গড়ে যেতে হচ্ছে । আমি যশোর থেকে ফিরে গিয়েই আমার সাধ্যমতো তোমার কিছু— পাঠান। আপনার পক্ষে যা ‘কিছু আমার পক্ষে তাই ঢের । হজুর, আপনার সেতার বাজানো আসে ?