পাতা:বংশ-পরিচয় (ঊনবিংশ খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

JOeV) বংশ-পরিচয় ভৈরবচন্দ্রের ভয় হইল-তরুণী কন্যা সন্ত-বিধবা হইয়া পাছে চিন্তার জালায় পাগলিনী হইয়া যায়-এইজন্য তিনি নিজ কৰ্ম্মের হ্রাস করিয়া তাহাকে সাস্তুনা দিতে লাগিলেন ; কিন্তু জামাতার শোকে ভৈরবচন্দ্রের স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া পড়িল । শরৎকুমারী তাহার পিতার প্রতি অত্যন্ত ভক্তি পোষণ করিতেন। তিনি পিতার স্বাস্থ্যভঙ্গহেতু একান্ত নিষ্ঠার সহিত তাহার সেবায় রত হইলেন। ইহার ফলে বৈধব্যের বেদনা কতকটা লঘু হইয়া গেল। পরিবারের কৰ্ত্তার জীবন বিপন্ন ; সেইজন্য শিশুপুত্ৰটীর প্রতি কেহ বড় একটা দৃষ্টি দিত না। তাহার বয়স তিন বৎসর হইলেও তখনও পৰ্য্যন্ত তাহার অন্নপ্ৰাশন ও নামকরণ হয নাই। শিশুর জন্মের কিঞ্চিদধিক দুই বৎসর পরে ভৈরবচন্দ্রের পীড়া কঠিনাকার ধারণ করে। ডাক্তারেরা বলেন,-ইহার আর ২৪ ঘণ্টা মাত্র আয়ু আছে। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবেরা তাহাকে দেখিতে আসিয়াছেন । ইহাদের মধ্যে মিঃ ডব্লিউ সি বনার্জি ও মিঃ তারকনাথ পালিত ( পরে স্তর ) ছিলেন । ইহারা পরামর্শ করিয়া স্থির করিলেন- এই সময়ে একটা উইল করা উচিত। কিন্তু কেহই সাহস করিয়া এই কথা তুলিতে পারিতেছেন না। কারণ, সকলেরই ভয় হইতেছিল যে, ইহাতে মৃত্যু আরও শীঘ্ৰ হইতে পারে। তখন সন্ধ্যা হইয়াছে । জীবন-স্রোতে ধীরে ধীরে ভাটা পড়িতেছে। হাত-পায়ের আঙ্গুলগুলি ঠাণ্ড হইয়া আসিতেছে। মনে হইতেছে,-আত্মা এই জীর্ণ পিঞ্জর ত্যাগ করিয়া অনন্তের পথে যাত্ৰা করিবার উদ্যোগ করিতেছে। এমন সময়ে হঠাৎ রোগী তাহার পুত্রকে বলিল,-বাহিরে যে লোক আমার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে তাহাকে বলিয়া দাও, আমার কাজ এখনও শেষ হয় নাই ; পাঁচ বৎসর পরে আমি যাইব । তঁহার পুত্র ফিরিয়া আসিয়া বলিল,-বাহিরে নূতন কোনও সাক্ষাৎপ্রার্থকে দেখিলাম না। রোগী তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিল এবং ক্রমে ক্ৰমে তাহার জীবনীশক্তি আবার ফিরিয়া আসিল ।