পাতা:বংশ-পরিচয় (নবম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মিনী S8 বীর পদ্মিনীর সঙ্গে সঙ্গে পাঠান শিবিরে গেল। পথে কোথাও পাঠানসৈন্যের সীমাবেশ না থাকায় পদ্মিনী অনায়াসে তাহার রাজপুত সৈন্য লইয়া ভীমসিংহের নিকট উপস্থিত হইলেন এবং আপন শিবিকায় ভীমসিংহকে তুলিয়া লইয়া কয়েকখানি শিবিকা-সমভিব্যাহারে চিতোরদুৰ্গে ফিরিয়া আসিলেন। এদিকে পদ্মিনীর আদর্শনে অস্থির হইয়া নির্বোধি আলাউদ্দীন ভীমসিংহের কারাকক্ষে যাইবামাত্র সশস্ত্র রাজপুত সৈন্যগণ শিবিকা হইতে বাহির হইয়া তাহাকে আক্রমণ করিল। পাঠান ও রাজপুত সৈন্যে তুমুল যুদ্ধ বাধিল। সে যুদ্ধে বীরবিক্রম রাজপুত সৈন্যের নিকট পরাজয় স্বীকার করিয়া আলাউদ্দীন দিল্লীতে ফিরিয়া আসিলেন। কিন্তু পদ্মিনীর পদ্মমুখ তাহার হৃদয়-দৰ্পণে প্ৰতিফলিত হইয়া নিশিদিন তঁহাকে জর্জরিত করিতে লাগিল। কিছুতেই তিনি পদ্মিনীর মুখচ্ছবি ভুলিতে পারিলে না। তাই কয়েক বৎসর পরে বহুসংখ্যক সৈন্য লইয়া আলাউদ্দীন পুনরায় চিতোর আক্রমণ করিলেন । এবার চিতোরের দ্বাদশবৰ্ষীয় বালক পৰ্য্যন্ত মৃত্যু পণ করিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিল। কিন্তু চিতোরের ভাগ্য রবি অস্তমিত হওয়ায় কিছুতেই কিছু হইল না। লক্ষ্মণসিংহ, ভীমসিংহ প্ৰভৃতি সকলেই প্ৰকাশ্য যুদ্ধে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিলেন। যখন একে একে চিতোরের আশা-ভরসাস্থল যোদ্ধবৃন্দ নারীর মান-মৰ্য্যাদা রক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্ৰাণত্যাগ করিলেন, তখন পদ্মিনী রাজপুত ললনাকুলের সহিত জলন্ত ভানলে ঝম্পপ্ৰদানপূর্বক রাজপুত নারীর মৰ্যাদা রক্ষা করিলেন। চিতোরের গৌরব-সুৰ্য্য অন্তমিত হইল। জনমানবশূন্য নগর শ্মশানের ন্যায় বিকট হাস্য করিতে লাগিল-ধু ধূ করিয়া রাজপুত ললনাগণের } দেহাবশেষ লইয়া চিতাগ্নি প্ৰজ্বলিত হইতে লাগিল। দুৰ্দ্ধৰ্ষ আলাউদ্দীন সেই চিন্তাধূমের মধ্যে চিতোর দুর্গে প্ৰবেশ করিয়া পাঠান শক্তির বিজয়-বৈজয়ন্তী উডডীন করিলেন।