পাতা:বংশ-পরিচয় (নবম খণ্ড) - জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুমার.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 ংশ-পরিচয় । শব লইয়া তাহাতে আরোহণ করিলেন। ভেলা গাঙ্গুর নদীর জলে ভাসিয়া চলিল। পূৰ্বে ঐ গাঙ্গুর নদী বৰ্দ্ধমানের বৈদ্যাডাঙ্গা দিয়া প্ৰবাহিত হইত ; তখন উহা স্রোতস্বতী ও দুকুলপ্লাবিনী ছিল ; কিন্তু কালচক্রের আবর্তনে এক্ষণে উহা শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত। নদীর স্রোতে ভাসিতে ভাসিতে কলার ভেলা দক্ষিণে বামে কত গ্রাম অতিক্ৰম করিয়া গেল। নদীর উভয় তীরে কত স্ত্রীপুরুষ জমা হইয়া বেহুলার পাতিব্ৰত্যের প্রশংসা করিতে লাগিল, আবার কেহ বা র্তাহার নিবুদ্ধিতার জন্য তাহাকে তিরস্কার করিতে লাগিল। বেহুলা কাহারও কথাতেই কোন প্ৰকার কর্ণপাত করিলেন না। নদীমধ্য হইতে শব্বভুক। জলজন্তুগণ উঠিয়া ভেলা আক্রমণ করিতে লাগিল, বেহুলা অতি কষ্টে তাহাদিগকে তাড়াইয়া দিলেন। কোন কোন দুর্ব ত্ত গ্রামবাসী তাহার ভুবনমোহন রূপমাধুৰ্য্য দেখিয়া, নানা প্রকার প্রলোভন দেখাইয়া তাহার প্রণয় প্রার্থনা করিল, বেহুলার মন তাহাতেও টলিল না । কেহ কেহ বা তঁহাকে ভীতি প্ৰদৰ্শন করিতে লাগিল। এই ভাবে দিনের পর দিন তিনি অনাহারে থাকিয়া স্বামীর মৃতদেহ রক্ষা করিতে লাগিলেন। ক্ৰমে লখিন্দরের শবদেহ পচিয়া উঠিল। শবদেহের পূতিগন্ধে চারিদিক দুৰ্গন্ধময় হইয়া উঠিল। বেহুলা তাহাতে একটু মাত্ৰ হতাশ না হইয়া সযত্নে স্বামীর শব রক্ষা করিতে লাগিলেন। এইভাবে ভেলায় ভাসিতে ভাসিতে বেহুলা স্বামীর শিব লইয়া ভাগীরথী নদীতে উপনীত হইলেন। পুণ্যসলিলা ভাগীরথীর জলে তিনি নিজে অবগাহন করিয়া স্বামীর শিব উত্তমরূপে গঙ্গাজলে বিধৌত করিলেন। অতঃপর সেই তরঙ্গিত নদীর জলে ভেলা ভাসাইয়া বেহুলা আবার চলিতে লাগিলেন। ক্ৰমে তিনি মুক্তবেণী ত্ৰিবেণীতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন প্ৰাতঃকাল, পূর্বগগনে বাল ভানুর অস্পষ্ট কিরণ-রেখা পতিত হইয়াছে, গাছে গাছে বিহঙ্গমসকল দিবসের