পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —“বেশ, বেশ। শুনে সুখী হলাম, এগিয়ে আছেন দেখছি। কোন ক্লাশ থেকে?”

 হাসিয়া কহিলাম, “বি-এ ক্লাশ থেকে।”

 —“বড় লেটে আরম্ভ করেছেন। আমি মাইনর ক্লাশ থেকে।”

 স্বহস্তে তামাক সাজিয়া হুঁকা আগাইয়া দিলেন, আমিও আমার স্ব-হস্ত বাড়াইয়া গ্রহণ করিলাম।

 আলাপ জমিয়া উঠিল এবং প্রগাঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি সেই আসরেই পত্তন হইয়া গেল। এমন কি একখানি গান, আসলে একটি ছত্র, পর্যন্ত তিনি গাহিয়া শুনাইলেন। ছত্রটি এই—“প্রভু! তুমি কত বড়, আমি কত ছোট, ভাবিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া যাই-ই।” ইহা তাঁহার পেটেণ্ট ও একচেটিয়া গান, অন্য কেহ গাহিলে অসন্তুষ্ট হইতেন। গানখানি হইতেই অনুমান করিয়া লইতে পারেন যে, রুণুবাবুরা ব্রাহ্ম। আমিও তাঁর “প্রভুর” দলে পড়িলাম, অর্থাৎ আমরা পরস্পরকে ‘প্রভু’ বলিয়াই সম্বোধন করিতাম, বয়সের ব্যবধান লোপ করিয়া আমরা সমবয়সী সখা হইয়া উঠিলাম।

 রুণবাবুর টাইপের লোক চার হাজার নন্দীর মধ্যে আর একটি আমি দেখি নাই। সবল স্বাস্থ্য, ওস্তাদ খেলোয়াড় (বিশেষ করিয়া হকি), ক্ষুরধার বুদ্ধি ও প্রতিভা মিলিয়া যে-ব্যক্তিত্ব প্রস্তুত হইয়াছিল, দেশের বিপ্লব-আন্দোলনের নায়কত্ব করিবার সমস্ত সম্ভাবনাই তাতে মজুত ছিল। কিন্তু কোথায় যেন কি একটি জিনিসের অভাব ছিল, তাই এত শক্তি তার যথোপযুক্ত কাজে লাগিল না। আমার অনেক সময়েই মনে হইয়াছে যে, বিধাতা একটি মহৎ আয়োজন করিয়া অভীষ্ট সিদ্ধির কাছাকাছি আসিয়া কি ভাবিয়া অবশেষে যেন হাল ছাড়িয়া দিয়াছেন। যে-শক্তি ও সম্ভাবনা লইয়া রুণুবাবু আসিয়াছিলেন, সে সম্বন্ধে তিনি নিজেও যে কেন সজাগ হইলেন না, ইহা আমার কাছে আজও প্রশ্ন রহিয়া গিয়াছে। বিধাতার সৃষ্টিও যে অর্থপথে অসমাপ্ত হয়, রুণুবাবু তার একটি দৃষ্টান্ত।

 ইহার বিপরীত দৃষ্টান্তও যে না দেখিয়াছি, এমন নহে। যাকে গ্রাহ্যের মধ্যে

৯১