পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তবে বস্তুর বিচার দূরে থাক, গুণের ভিত্তিটাই যে লোপ পাইয়া যায়। তাই হার মানিয়া বলিতে হয় যে,—মোট কথা, গুণের স্বভাবই প্রকাশিত হওয়া বা প্রকাশ পাওয়া।

 বুদ্ধিতে শান দিয়া যদি তীক্ষ্ণ করিয়া লওয়া যায়, তবে এও আবিষ্কার করা সম্ভব যে, সৃষ্টিতে বস্তু নাই শুধু প্রকাশ আছে, অর্থাৎ শুধু গুণই আছে। তাই সৃষ্টির রহস্য বুঝিতে গিয়া আমাদের কবি অবাক হইয়া বলিয়া ফেলিয়াছেন, “তুমি কেমন করে গান করহে গুণি!” বলা বাহুল্য, বস্তু বলিতে ঐ গুণিকেই বুঝায়। বস্তু চিরকাল আড়ালেই থাকে, সুতরাং সৃষ্টিতে ঐ গুণী বা স্রষ্টা চিরকালই অদৃশ্য হইয়া রহিলেন। গুণের গোলকধাঁধাঁ পার হইয়া গুণীতে যিনি পৌঁছিতে পারেন, একমাত্র তাঁরই হিসাব মিলিয়া যায়। এদেশে তাঁকেই মুক্ত-পুরুষ বলা হয়। অর্থাৎ চৌদিকেতে গুণের যে ফাঁঁদ পাতা আছে, তার এলাকার বাহিরে গিয়া তিনি নির্গুণ বা গুণমুক্ত হইয়া পড়েন। একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করিবার মত যে, যাঁকে গুণী বলা হইল, তাঁকে কিন্তু জানা গেল নির্গুণ। গীতা না ভাগবতে কোথায় যেন ভগবান বেদব্যাস ব্রহ্মকে “নির্গুণ-গুণী” বলিয়া আখ্যা দিয়াছেন।

 দেখিতেছি, কেঁচো খুঁড়িতে সাপ বাহির হইয়া পড়িল, গুণের পিছনে ধাওয়া করিয়া একেবারে ব্রহ্মের সম্মুখে আসিয়া হাজির হইয়াছি। দোষটা আমার নয়, কেঁচোরও নয়, দোষটা সাপের, কারণ কেঁচোর গর্তে সে বাসা লইয়াছে। এই সৃষ্টিতে সব গুণের গর্তে বস্তুর বদলে যদি ব্রহ্ম বাসা বাঁধিয়া থাকে, তবে বুদ্ধির খানাতল্লাসীতে ব্রহ্ম বাহির হইয়া পড়িবেই, সে জন্য আমাকে বা আপনাদের কাহাকেও দোষ দেওয়া ভুল।

 গুণ থাকিলে তাহা চাপা থাকিবে না, এই বিশ্বাস বা ফর্মুলা লইয়া পৃথিবীতে চলিবার জন্যই কস্তুরী—মৃগের কথাটা প্রবীণেরা এভাবে উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন। অনেকে দুঃখ করেন যে, তাঁদের মূল্য বা মর্যাদা পৃথিবী স্বীকার করিল না। আমাদের হাতের ফর্মুলার নিকষ-পাথরে কষিয়া দেখিলে

১০৭