পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অমর বলিতেছিল, “অদৃষ্টে নেই পুত্রের রোজগার পাওয়া, আমি চেষ্টা করলে কি হবে! নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারল, সাধা লক্ষ্মী পায়ে ঠেলল, আমি কি করব।” বলিয়া অমর উঠিয়া পড়িল।

 আজ পিছনে ফিরিয়া তাকাইয়া ভাবিতেছি যে, সেদিন বৃদ্ধ হিমালয়ের ক্রোড়ে বসিয়া যত হাসি আমরা হাসিয়াছিলাম, তার কোন চিহ্নই কি সেই মৌন পাষাণের বুকে দাগ কাটে নাই, গ্রামোফোনের রেকর্ডের রেখা হইতে স্বরসঙ্গীত উদ্ধার করিবার কৌশল মানুষ আবিষ্কার করিয়াছে, ঐ পাষাণের বুকের দাগ হইতে কোন উপায়েই কি সেদিনকার পুঞ্জপুঞ্জ আনন্দ-হাসিকে উদ্ধার করা সম্ভব নহে? স্মৃতির যাদুকাঠির ছোঁয়া দিয়া শুধু আমার কাছেই তাহা আমি পুনরুজ্জীবিত করিয়া লইতে পারি, কিন্তু সংসারের আর দশজনকে তো তার অংশীদার করিতে পারি না।

 অথচ শুনিতে পাই যে, ত্রিকালের কোন কিছুই নাকি হারায় না, ভূত-ভবিষ্যৎ-বর্তমান ত্রিকালের খণ্ড সীমানা পার হইয়া অনন্তকালে সত্যই নাকি তারা চিরবিদ্যমান। আমাদের জগতেই কেবল হৃদয়ের সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে শুধু জীবনের পথপ্রান্তে ফেলিয়া যাইতে হয়। কিন্তু যে-জগতে সমস্ত সঞ্চয় চির অস্তিত্বে বর্তমান, সে-জগতের সন্ধান কালের সীমাবদ্ধ এই দৃষ্টিতে পাওয়ার তো উপায় নাই। শুনিতে পাই, কবি, গুণী, সাধক, প্রভৃতির প্রতিভায় ও মনীষায় নাকি কদাচিৎ সেই অলৌকিক লোকের আলোক-আভাস ধরা পড়ে। কিন্তু আমরা তাহারা নই, তাই স্মৃতিই শুধু আমাদের একমাত্র সম্বল ও আশ্রয়।

১১৭