স্তন্য পান করাইয়া যে সুখ ও তৃপ্তি বোধ করিয়া থাকেন, আমাদিগকে খাওয়াইয়া দক্ষিণাদাও অনুরূপ সুখ বোধ করিতেন।
রান্নাঘর যে এমন সাংঘাতিক ব্যাপার, তাহা কে আগে মনে করিতে পারিয়াছিল। চৌর্যবিদ্যা-চর্চার এমন ক্ষেত্র আর দ্বিতীয়টি হইতে নাই। এই বিষয়ে হাতযশ যার যত বেশী, তার ক্ষমতাও তত অধিক, এমন কি, সিপাহীরা পর্যন্ত তার হাতের মধ্যে আসিয়া পড়িত। সুতরাং এই বিদ্যায় যারা গুরু ও শিক্ষক, উভয় পক্ষকেই ঠেকাইবার জন্য দক্ষিণাদাকে ভোরে রান্নাঘর খোলা হইতে রাত্রে রান্নাঘর বন্ধ করা অবধি প্রায় সময়টাই এই মহলে থাকিতে হইত। তদুপরি, ঠাকুর-চাকরদের মধ্যে নানা কারণে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়াই থাকিত, অরাজকতা দমনের জন্যও দক্ষিণাদার রন্ধনশালায় উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল।
দক্ষিণাদা চাকরদের মধ্যে কাজ বিভাগ করিয়া দিয়াছিলেন! গোবিন্দ পড়িয়াছিল চা-টিফিন-বিভাগে। ইতিমধ্যে গোবিন্দ সম্বন্ধে কানাঘুষা শোনা যাইতে লাগিল, গোবিন্দ ঠাকুর-চাকরদের লইয়া মিটিং করে।
বিজয়বার (দত্ত) রাম-অবতারকে একদিন জিজ্ঞাসা করিলেন, “এই, গোবিন্দ তোদের কি বলে রে?”
সে উত্তর দিল, “গোবিন্দ বাবু লেখাপড়া জানে।”
—“সত্যি?”
—“হ্যাঁ, বাবু। মদীর দোকানে খাতা লিখত।”
—“বটে?”
রাম-অবতার বলিল,—“হ্যাঁ, বাবু। আমাদের রামায়ণ-মহাভারতের গল্প বলে।”
ইহার পরে আর আপত্তি করে কাহার সাধ্য।
বিজয়বার কহিলেন, “গোবিন্দ খুব পণ্ডিত, না রে?”
রাম-অবতার খুশী হইয়া গেল, বলিল, “গোবিন্দকে আমরা খুব মান্য করি।”
প্রভু-ভৃত্যের আলাপ নিজের সীটে বসিয়াই শুনিতেছিলাম। গোবিন্দ সম্বন্ধে মনে মনে শ্রদ্ধায় আপ্লুত হইয়া পড়িলাম।
১১৯