পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সাজিয়াছে। কাজেই আমি মানে কলমটা উক্ত কর্ণধারের হাতে মোচড় খাইয়া যন্ত্রবৎ চালিত হইতেছে।

 আমার সমস্ত ভূমিকা, ভণিতা বা বক্তব্যের সার মর্ম—আমার স্বভাবমত চলিবার ও বলিবার অনুমতি আমি আপনাদের দশজনের দরবারে প্রার্থনা করিতেছি।

 বিপ্লবী, সন্ত্রাসবাদী ইত্যাদি নামে পরিচিত হইলেও আমরা ছিলাম বাঙালী, একথাটা স্মরণ রাখিতে আজ্ঞা হয়। আর দশজন বাঙালীর যে সমস্ত দোষগুণ থাকে, তাহা হইতে আমরা বঞ্চিত ছিলাম না। বাঙালী-চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বলিতে যদি সত্যই কিছু থাকিয়া থাকে, তবে তাহা আমাদেরও ছিল। তবু একটা বিষয়ে সাধারণ বাঙালী হইতে বিপ্লবীর একটু স্বতন্ত্র ছিল। সেই স্বাতন্ত্র্য বা বৈশিষ্ট্য একটি কথায় ব্যক্ত করিলে বলিতে পারি—চরিত্র।

 এই চরিত্র-শক্তিটুকু যদি বাদ দেওয়া যায়, তবে বাঙলার ইতিহাস হইতে স্বদেশী ও বিপ্লব আন্দোলনের মূল ভিত্তিটিই অপসারিত হইবে এবং বাঙলাদেশের ইতিহাস ভারতবর্ষের অপরাপর প্রদেশের ইতিহাসের ভীড়ের মধ্যে ঝাঁকের কই-এর মত মিশিয়া যাইবে। বিপ্লবীদের চরিত্র-শক্তির মূল অনুসন্ধান করিতে গিয়া দুইটি বিশেষ উপাদান আমার দৃষ্টিতে পড়িয়াছে। ইহাদের মধ্যে একাধারে সৈনিক ও সাধক দুইটি চরিত্রের সম্মেলন দেখা যায়। বিবেকানন্দের মানসরসেই ইহা পুষ্ট ও বর্ধিত হইয়াছে। কুরুক্ষেত্রের শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁহার গীতাই ছিল বিপ্লবীদের জীবনের আদর্শ ও পাথেয় একাধারে। পুরাতন বিপ্লবীদের সম্বন্ধেই এই কথা প্রযোজ্য। গান্ধীযুগে যাঁহারা বিপ্লবীদলে যোগ দিয়াছেন, তাঁহাদের সম্বন্ধে বহুক্ষেত্রেই পূর্বোক্ত অভিমত প্রযোজ্য নহে, ইহা আমি অস্বীকার করি না। তবু সকলকে একত্রিত করিয়া একই পটভূমিকায় দাঁড় করাইয়া দেখিলে দেখা নিশ্চয় যাইবে যে, সৈনিক ও সাধক দুইয়ের মিশ্রণে মূলত বিপ্লবীদের চরিত্র গঠিত। এই চরিত্রশক্তির বৈশিষ্ট্যটুকু বাদ দিলে আর দশজন বাঙালী হইতে ইহাদের তেমন কোন পার্থক্য বা স্বাতন্ত্র্য উল্লেখ করিবার মত আমার দৃষ্টিতে পড়ে না।

১২৬