পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেহের গতিভঙ্গীতে ব্যক্ত করিয়াছিলেন, তাহাতেই আমি আবিষ্কার করিলাম যে, ইনি আসলে বুদ্ধিজীবী নহেন, এঁর সত্তার গভীরে একজন আর্টিস্ট একাকী বসবাস করিয়া যাকে। জ্ঞানবাবুর এই পরিচয় তাঁহার বন্ধুদের নিকটও হয়তো অজানা রহিয়া গিয়াছে। বাংলার প্রধান মন্ত্রীর আসনে জ্ঞানবাবুকে উপবিষ্ট দেখিলে আমি অন্তত অযোগ্য ব্যক্তির উচ্চ-পদাধিকার বলিয়া তাহা মনে করিতাম না। এখানে উল্লেখ থাকে যে, বড় বড় ডাকাতিতে জ্ঞানবাবু অংশ গ্রহণ করিতেন।

 জ্ঞানবাবুর পাশে যিনি দণ্ডায়মান, দেখিলেই যাঁহাকে স্মার্ট, চট্‌পটে, সর্ব অবস্থায় সদা প্রস্তুত ও সপ্রতিভ বলিয়া মনে হইবে, তাঁহাকে আপনারা নিশ্চয় চিনেন ও জানেন। তিনি ভূপতিদা (মজুমদার)। বয়স্কদের মধ্যে ফুটবল খেলায় ইঁহার জুড়ি নাই। যৌবনে প্রথম শ্রেণীর খেলোয়াড় ছিলেন। আসরে গল্প জমাইতে ভূপতিদার সমকক্ষ ব্যক্তি সকল সমাজেই খুব কম আছে। এঁর ইংরেজী ভাষার উপর দখল অনেকেরই ঈর্ষার উদ্রেক করিবে। বিখ্যাত বিপ্লবী নেতা যতীন মুখার্জীর ইনি সহকর্মী ও যুগান্তর পার্টির অন্যতম নেতা। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় জার্মান-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তখন সিঙ্গাপুরে গোপনে গমন করেন। সেখানে বন্দী হন এবং ঠিক বলিতে পারি না, সিঙ্গাপুর দুর্গ হইতে হয়তো ইনি পলায়নই করিয়াছিলেন। ক্ষুদ্রতা এঁর চরিত্রে নাই। চরিত্রে ভূপতিদা ছিলেন আসলে কবি ও সাহিত্যিক। আনন্দই ছিল ইঁহার বিধিদত্ত সাধনা, কিন্তু তার বদলে ইনি দেশের স্বাধীনতাকেই তরুণ বয়সে জীবনের সাধনা বলিয়া গ্রহণ করেন। জেল-জীবনে ভূপতিদাকে পাশে পাওয়া মানে দুঃখ, চিন্তা ও ভাবনার হাত হইতে রেহাই পাওয়া। এই খেলোয়াড় আর্টিস্টকে শুধু একা আমিই নয়, দল-নিরপেক্ষভাবে আরও অনেকেই নিজের পরম নিকট আত্মীয় বলিয়া গ্রহণ করিতে পারিয়াছিল।

 তাঁহার পাশেই গৌরকায় যে সুদর্শন ব্যক্তিটিকে দেখিতেছেন, তাঁহাকে আপনাদের না-চেনার কথা নহে। ইনিই প্রতুলবাবু (গাঙ্গুলী), দীর্ঘদিন

১৩৬