পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরোভাগে। এঁরও জেলজীবন ত্রিশ বছর না হইলেও খুব কম নহে, পঁচিশ বছরের উপরে তো বটেই। বিপ্লবীদের মধ্যে ইনিই সর্বপ্রথমে গান্ধীজীর নন্‌কো-পারেশন আন্দোলনে যোগদান করেন। এই সময়ে বিখ্যাত ‘শান্তি সেনা’ প্রতিষ্ঠান তিনি গঠন করেন, সারা বাঙলায়, সকল জেলায় এবং আসামেও ইঁহারই নিয়ন্ত্রিত প্রায় ২০ হাজার শান্তি-সেনা ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। বাঙলার বিপ্লবীদের মধ্যেই শুধু নহে, সারা বাঙলাতেও এঁর মত সংগঠন-শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি দ্বিতীয় নাই। এদিক দিয়া পূর্ণ দাস প্রকৃতই প্রতিভা।

 এবার আপনারা শূলের সম্মুখীন হউন। শূল শুনিয়া ভয় পাইবেন না, এঁর আসল পরিচয় এঁর ডাক নামটির মধ্যেই ব্যক্ত—মধু ঘোষ। চোখেমুখে স্মিত হাসি, পরম আত্মীয়ের মত ব্যবহার, এঁর বৈশিষ্ট্য। যাদুগোপাল মুখার্জী সর্বজনস্বীকৃত নেতা হইলেও কর্মক্ষেত্রে সুরেনবাবুই পার্টির নেতা। এঁর মধ্যে সৈনিকের চেয়ে সাধকই অধিকতর অভিব্যক্ত। বাঙলা দেশের রাজনীতিক্ষেত্রে যে কতিপয় ব্যক্তি বুদ্ধিমান বলিয়া খ্যাত, সুরেনবাবু তন্মধ্যে অন্যতম। ১৯২৩ সালে ইনিই ছিলেন দেশবন্ধুর প্রকৃত পরামর্শদাতা বা দক্ষিণ হস্ত। বিবাদ মিটাইতে, সমস্যার সমাধান করিতে সকলকে একত্রিত করিয়া একযোগে কাজ করিতে সুরেনবাবুর সহজাত নৈপুণ্য ছিল। এঁর বন্ধু-প্রীতি অনুসরণ করিবার মত বস্তু। পরে ইনিই দীর্ঘ কয়েক বৎসর বাঙলা কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। সুরেনবাবুর আর একটি পরিচয় আছে, বিপ্লবী হইয়াও চরিত্রে ইনি ব্রাহ্মণ। জেল জীবনেই স্বপ্নে শ্রীঅরবিন্দের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন এবং মুক্তির পরে পণ্ডিচেরীতে স্থায়ী আশ্রমবাসীরূপে বসবাস সংকল্প ইনি করিয়াছিলেন। কিন্তু ঘটনা ও অবস্থার চক্রান্তে কর্মজীবন হইতে ইচ্ছা সত্ত্বেও ইনি মুক্ত হইতে পারেন নাই। অনুশীলন-যুগান্তর উভয় দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে মধুদাকেই আমি সর্বাধিক আপনজন রূপে গ্রহণ করিয়াছিলাম দলের বিরোধ সত্ত্বেও। আমার মনে হয়, রাজনীতি হইতে আশ্রম-জীবনেই মধুদার সত্যিকার স্থান।

 পরিচয়ের পালা শেষ করিয়া আনিয়াছি, এখন আর একজনের সঙ্গে পরিচয়

১৪২