পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়াই বীরদ্বরকে অর্ধেক ঘায়েল করিয়া আনিবেন। বাকীটা অর্থাৎ মড়ার উপর খাড়ার ঘা দিবার ভারটুকু মাত্র তিনি মাঠের খেলোয়াড়দের উপর দয়া করিয়া ছাড়িয়া দিয়াছেন। খেলাটা বিশেষভাবে এইখানেই এবং মাঠেও মারাত্মকভাবে জমিয়া উঠিয়াছিল।

 যোগেশ চক্রবর্তী বল লইয়া ছুটিয়া আসিতেছে, ব্যাকের প্রায় কাছাকাছি আসিয়া পড়িল বলিয়া। রবিবাবু খাঁচার বাঘের মত গোলের দুই পোস্টের মধ্যে বলের গতি অনুযায়ী একবার ডাহিনে, আবার বাঁয়ে হেলিতেছেন, চেঁচাইয়া বলিলেন, “সন্তোষ, অপোজ হিম, চার্জ কর।”

 পিছন হইতে ক্ষিতীশদা রবিবাবুকে পরামর্শ দিলেন, “দুর্গা দুর্গা বলে বুক চেপে ধরুন, চোখ বন্ধ করুন, ফাঁড়া কেটে যাবে।”

 রবিবাবুর এই দিকে কান দিবার মত অবস্থা ছিল না। তিনি সত্য সত্যই ‘সিরিয়স’ হইয়া উঠিয়াছিলেন, এবার ধমক দিয়া উঠিলেন, “অপোজ হিম।”

 হুকুম পাইবার পূর্বেই সন্তোষ দত্ত ‘অপোজ’ করিতে কুইকমার্চে ছুটিয়াছিলেন, ব্যাকের একটা দায়িত্ব আছে তো। কিন্তু যোগেশ চক্রবর্তী মানুষ মোটেই সুবিধার নয়, সন্তোষদার সন্মুখ দিয়াই বল লইয়া পাশ কাটাইয়া বাহির হইল। কাপুরুষ, ভয়ে পাশ কাটাইয়া পলায়ন করিল এবং গোল লক্ষ্য করিয়া ধাঁ করিয়া কিক্ করিয়া বসিল—বল গোলের অভিমুখে উঁচু হইয়া ছুটিয়া আসিল।

 রবিবাবু পুরোভাগে ব্যাক সন্তোষ দত্তের অক্ষমতায় ও পশ্চাৎভাগে মাঠের বাহিরে ক্ষিতীশদার মর্মভেদী খোঁচায় অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সমালোচনায় যৎপরোনাস্তি চটিয়া রহিয়াছিলেন। বলটা তাঁর নাকের বরাবর হাত দুই দূরে থাকিতেই রাগিয়া এমন ঘুষি মারিলেন, যেন এতদিনে ভগবান দয়া করিয়া বৃটিশ জাতিটারই মুখটি বলাকারে তাঁহার থাবার সম্মুখে ধরিয়া দিলেন—‘মরি কি বাঁচি’ করিয়া তিনি ঘুষি ছাড়িলেন।

 একে তো রবিবাবু শক্তিমান পুরুষ, তদুপরি বেশ একটু তপ্ত হইয়াই ছিলেন, ঘুষির জোরটা কাজেই মোক্ষমই হইয়াছিল। বলটা মাঝ মাঠ পর্যন্ত ফিরিয়া

১৬১