পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চলিয়াছি এবং এ-দেশের কপালে না জানি আরও কি ভয়াবহ দুঃখ ও দুর্গতি লেখা আছে! ইংরেজের চরিত্রের আর নূতন করিয়া বিচার বা সমালোচনা আমরা করিলাম না। আমরা ভাবিত হইলাম অন্য কারণে।

 চট্টগ্রামে মুসলমান সমাজের যে-মনোভাব ও চরিত্র সেদিন ব্যক্ত হইয়াছিল, তাহাই আমাদের বিশেষভাবে ভাবিত করিয়া তুলিয়াছিল। সাম্প্রদায়িকতা কোন স্তরে ও কত অন্ধ হইয়া অবস্থান করিতেছে যে, এত অনায়াসেই বিদেশীদের হাতে অগ্নি-ইন্ধন হইয়া দেশের ঘরেই আগুন লাগাইতে পারে! জাতীয়তা ও স্বাধীনতার কত বড় বিপজ্জনক শত্রু যে দেশের ঘরেই কুণ্ডলী পাকাইয়া গুপ্ত রহিয়াছে, সেদিন আমরা বুঝিতে পারিলাম। কোন ভয়াবহ ভবিষ্যতের প্রথম ও পূর্ণ রিহার্সেল যে সেদিন চট্টগ্রামে দেওয়া হইয়াছিল, তাহা ভালো করিয়া বুঝিতে অবশ্য ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগষ্ট পর্যন্ত দেশকে অপেক্ষা করিতে হইয়াছিল।

 আমাদের ভাগ্যের আকাশে ঝড়ের মেঘ ঘনাইয়া আসিল। বে-সরকারী ইংরেজ মহলে প্রকাশ্যে অভিমত ব্যক্ত হইতে লাগিল যে, বিপ্লবীদের শায়েস্তা করা আশু প্রয়োজন। ‘ভারত-বন্ধু’ ষ্টেটসম্যান পত্রিকা সম্পাদকীয় প্রবন্ধে পরামর্শ দিলেন, বন্দিশিবির হইতে নেতৃস্থানীয় বিপ্লবীদের বাছিয়া লইয়া দেয়ালে পিঠ দিয়া দাঁড় করানো হউক! তারপর? তারপর আর বিশেষ কিছু নহে, গুলী করিয়া ইহাদের একটি একটি করিয়া হত্যা করা হউক। লাভ? লাভ হইবে এমন শিক্ষালাভ যে, জীবনে এদেশে কেহ আর কখনও বিপ্লবী হইবার কথা মনে আনিতেও সাহস পাইবে না, বিপ্লব তো অনেক দূরের কথা।

 আমরা বাঁচিয়া আছি দেখিয়া মনে করিবেন না যে, এই পরামর্শ পরীক্ষা করিয়া দেখা হয় নাই। চট্টগ্রামের আগুন ভালো করিয়া নেভেও নাই, চট্টগ্রামের দিন পনর পরেই এই পরামর্শ বাস্তবে কার্যকরী করা হইয়া গেল।

 ১৭ই সেপ্টেম্বর পত্রিকার খবর পড়িয়া বক্সা ক্যাম্পে মৃত্যুর কালো ছায়া নামিয়া আসিল। খবরে প্রকাশ যে আগের দিন রাত্রে হিজলী বন্দিশিবিরের মধ্যে ঢুকিয়া সিপাহীরা বেপরোয়া গুলীবর্ষণ করিয়াছে। রাত্র তখন সাড়ে নয়টা হইবে,

১৭৬