পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাটাছেঁড়া লইয়াই একের কারবার, তাই দেহে ও মনে দয়া মায়া ইত্যাদি দুর্বলতা এদের থাকেও না। আর, দ্বিতীয়টির কারবারও প্রায় ঐ একই গোছের। লোহা পোড়াইয়া হাতুড়ী পিটাইয়া গঠন দেওয়া, পাহাড় ফাটাইয়া পথ বাহির করা, বাঁধ বাঁধিয়া নদীকে নিয়ন্ত্রিত করা ইত্যাদি। অর্থাৎ বিশ্বকর্মার বিরাট হাতুড়ী ইহাদের হাতে, হাতুড়ীতে একদিক দিয়া ভাঙেও যেমন, গড়েও তেমন। এই ভাঙা-গড়ার কাজে ইহাদেরও দেহ ও মন হইতে দুর্বলতার ক্লেদটুকু মার্জিত হইয়া স্বভাবে একটি নির্মম কাঠিন্য সঞ্জাত হয়।

 বিজয় ছিল ইঞ্জিনীয়ার। ছাত্র-জীবনে কলেজে শারীরিক শক্তির শ্রেষ্ঠ পুরস্কার “হিরো অব দি ডে”-এর লরেল কয়েকবারই সে পাইয়াছিল। শরীরে অসুরের শক্তি। শরীরটাও অসুরের। লোকে বিজয় দত্ত না বলিয়া বলিত বিজয় দৈত্য।

 সালটা ঠিক মনে নাই, বোধ হয় ১৯২৯ সালই হইবে। মাদারীপুরের যে সরকারী রাস্তাটা কোর্টের দিক হইতে থানার অভিমুখে গিয়াছে, বিজয় সেই রাস্তা ধরিয়া আগাইতেছিল; সময় তখন অপরাহ্ণ। বিপরীত দিক হইতে পুলিশ সুপার হলম্যান সাহেব ছ’ফুট তিন ইঞ্চি শরীর লইয়া আরদালী সহ লম্বা পায়ে আসিতেছিলেন।

 বিজয় মনে করিল যে, সাহেব পাশ কাটাইয়া যাইবে, সাহেব মনে করিলেন যে, বাঙ্গালীবাবু পাশ কাটাইয়া যাইবেন। অর্থাৎ উভয়েই মিলিটারী। একের মনোভাব, নিজের দেশে নিজের সহরের রাস্তায় ঐ ব্যাটাকে পথ ছাড়িয়া দিয়া সরিয়া দাঁড়ানো চলিতে পারে না। অপরের মনোভাব, রাজার জাতি, তদুপরি পুলিশের বড়কর্তা, সহরের রাস্তায় তাঁরই অধিকার এবং নেটিভকে পথ ছাড়িয়া দেওয়া, সে কি একটা কথা হইল! ফলে, বিপরীত দিক হইতে দুই দৈত্য একে অপরের মারাত্মকভাবে মুখোমুখী হইয়া পড়িল, পরমূহূর্তেই কলিশন।

 মিঃ হলম্যান ধাঁ করিয়া এক ঘুষি মারিয়া বসিলেন। বিজয় প্রত্যুত্তরে দিল দুই ঘুঁষি, চোট সামলাইতে না পারিয়া সাহেব পুঙ্গব মাটিতে গড়িয়া গেলেন।

১৮২