পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধরিয়াছেই যখন, দেই না কেন নামটা ফাঁস করিয়া। নামটা আমার জিহ্বা হইতে সাহেবের কর্ণে চালান করিয়া দিলাম।

 মিঃ কোট্টাম যে অত্যন্ত নার্ভাস প্রকৃতির মানুষ, এই প্রথম পরিচয়েই তাহা বুঝিতে পারিয়াছিলাম। দু’দিন না যাইতেই তিনি ক্যাম্পে একটা হৈ-হৈ তুলিয়া দিলেন।

 এতদিন আমাদের রোলকলের তেমন কোন হাঙ্গামা ছিল না। ফিনী সাহেবের আমলে মিঃ লিউলিন আই-সি-এস ছিলেন এডিসন্যাল কমাডাণ্ট, একটা খাতা বগলে তিনি সারা ক্যাম্পে ঘুরিয়া ঘুরিয়া নাম মিলাইয়া দাগ দিয়া যাইতেন। এই জন্য কখনও রান্নাঘরে, কখনও স্নানের ঘরে, এমনকি, পায়খানার মহল পর্যন্ত তাঁহাকে ধাওয়া করিতে হইত। অর্থাৎ রোলকলের নির্দিষ্ট একটা সময় থাকিলেও আমরা সেই নির্দিষ্ট সময়ে স্ব স্ব স্থানে থাকিতে অভ্যস্ত ছিলাম না।

 কোট্টাম সাহেবের এই অবস্থা মোটেই মনঃপুত বোধ হইল না। তিনি একদিন ব্যবস্থা দিলেন যে, ভোর আট ঘটিকার সময় প্রত্যহ সকলকে ক্যাম্পের বাহিরে খেলার মাঠে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইতে হইবে, তখন রোলকল বা নাম-ডাকা হইবে। হুকুম শুনিয়া, আসলে পাঠ করিয়া আমরা ভাবিলাম, ব্যাটা বলে কি!

 তিন পার্টির তিন সভা বসিয়া গেল, বিবেচনার বিষয় হইল—কিং কর্তব্যং। আমাদের পার্টির সভায় সভাপতির আসন গ্রহণ করিলেন মাষ্টার মশায় (যতীশ ঘোষ)। সভায় বয়স্করা মন্তব্য করিলেন যে, আমরা এতকাল সুযোগের অপব্যবহার করিয়াছি, লিউলিন ভালো মানুষ বলিয়া রোলকলের সময়টা সীটে না থাকিয়া যদৃচ্ছ ঘুরিয়া বেড়াইয়াছি, তাই আজ এই সমস্যা।

 কে একজন বলিলেন, “তাতো বুঝলাম, এখন কি করবেন, তাই বলুন”

 কি করা যায়, কাঁচা পাকা সব মাথাতেই এই প্রশ্নটার নাড়াচাড়া চলিতেছিল। স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করায় সকলেই সাময়িকভাবে চুপ করিয়া গেলেন।

১৮৫