পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/১৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাওয়া ও দেওয়া বন্ধ হইল। আরও কয়েকজনের ক্ষেত্রেও এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তিনি গ্রহণ করিলেন।

 ব্যাপার এখানেই শেষ হইল না। ঢাকায় কোট্টাম সাহেব স্বদেশী পরিবারগুলির উপর যে-নির্যাতন করিয়াছেন, সে-জ্বালা অনেকেরই মনে ছিল। তার সঙ্গে যুক্ত হইল ক্যাম্পের এই বিরক্তিজনক ও অপমানকর ব্যবহার। ক্যাম্পের বাতাসে একটা সম্ভাবনা ঘুরাফিরা করিতে লাগিল যে, হয়তো কিছু একটা শীঘ্রই ঘটিবে।

 কিছুটা ঘটিয়াও গেল। একদিন দুপুরবেলা খবর আসিল যে, অফিসে ধীরেনবাবু (মুখার্জি) কোট্টামকে জুতা ছুঁড়িয়া মারিয়াছেন এবং তাঁহাকে সেলে আবদ্ধ করা হইয়াছে। পরদিন শোনা গেল যে, পূর্ণানন্দবাবুও (দাশগুপ্ত) পূর্বদিনের ন্যায় অফিসে কোট্টামকে জুতা মারিয়াছেন এবং তিনিও সেলে আবদ্ধ হইয়াছেন।

 পূর্ণানন্দবাবু অনুশীলন-পার্টির লোক, তেজস্বী ব্যক্তি, তাঁহারই নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটে। কাজেই অনুশীলন-পার্টির এই কাজটিকে সমর্থন করা কোন কোন মহলে স্বভাবতঃই সম্ভব হয় নাই, এমন কি নিন্দাই শোনা গেল। নিরপেক্ষ মহল হইতে বুদ্ধিমান ব্যক্তিগণ মন্তব্য করিলেন যে, কাজটা ভালো হয় নাই।

 ক্যাম্পে জনমত গঠনের এই চেষ্টাটা আমার ভালো লাগিল না। বন্ধুবর পঞ্চাননবাবু এবং আমিও প্রকাশ্যে এই কাজ সমর্থন করিয়া বলিলাম যে, ব্যাটার প্রাণ যাওয়াই উচিৎ ছিল, জুতার উপর দিয়া গিয়াছে, ইহা কোট্টামের ভাগ্যই বলিতে হইবে।

 জলপাইগুড়ি কোর্টে পূর্ণানন্দবাবু ও ধীরেনবাবুর বিচার হইল, বিচারে উভয়ের ছয় মাস জেল হইল। কোট্টাম সাহেবকে জুতা মারার অপরাধে তাঁহারা ডেটিনিউ-স্বর্গ হইতে চ্যুত হইয়া কয়েদীর ভূতলে পতিত হইলেন, জলপাইগুড়ি হইতে কলিকাতার জেলে তাঁহারা চালান হইয়া গেলেন।

১৮৮