পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়া কাঁপিয়া উঠিল। উঃ, গলার জোর যে কত ভীষণ হইতে পারে, সেদিন প্রত্যক্ষ প্রমাণ পাইলাম।

 পরে শুনিয়াছিলাম যে, এ আওয়াজ জেল অফিসে পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিয়াছে এবং অফিসের বাবুরা একটু চমকিত মানে চমকাইয়া উঠিয়াছিলেন। ডেপুটি জেলার নাকি প্রশ্ন করিয়াছিলেন—“ব্যাপার কি? হল্লা কিসের?”

 জেলারবাবু প্রবীণ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি, অনুমানেই ব্যপারটা বুঝিয়া লইয়াছিলেন—“ও কিচ্ছু না, বক্‌সা যাবার খবর পেয়ে ডেটিনিউরা উল্লাস করছে।”

 —উল্লাসই বটে!

 আমরা ছিলাম চৌদ্দজন, নয়জনের উপব বক্‌সা বদলীর অর্ডার হইল। আরও জানানো হইল যে, সেদিন দুপুরের গাড়িতেই আমাদের রওনা হইতে হইবে।

 বক্‌সা যে যাইতে হইবে, এ খবরটা আমি আগেই পাইয়াছিলাম। খবরটা পাই সিউড়ির এক নাপিতের নিকট। বাহির হইতে নাপিত আসিয়া আমাদের ক্ষৌরকর্ম সম্পাদন করিয়া যাইত। সপ্তাহখানেক আগে সেলের ইয়ার্ডে চেয়ার পাতিয়া বসিয়া বই পড়িতেছিলাম, সিপাহী আসিয়া দেখা দিল, সঙ্গে এক নরসুন্দর।

 বাহিরের লোক কেহ জেলে আসিলে জেলের পুলিশ, পাহারা বা অফিসার কেহ একজন সঙ্গে থাকার নিয়ম আছে। জেলে ঢুকাইবার সময় একবার এবং জেল হইতে বাহির হইবার সময় আর একবার, মোট দুইবার এই বহিরাগতদের কাপড়-ঝাড়া দিয়া তল্লাসী করিবার ব্যবস্থাও আছে। এমন কি, সিপাহীদের ক্ষেত্রে পর্যন্ত এই নিয়মটি প্রযুক্ত হইয়া থাকে। জেলের কোন মাল বা কাগজপত্র অথবা স্বদেশীদের কোন চিঠিপত্র ইহারা বাহিরে লইয়া যাহাতে না যাইতে পারে, কিংবা বাহির হইতে কোন বস্তু ভিতরে আমদানী যাহাতে না করিতে পারে, সেই জনই এই ব্যবস্থা। জেলের নিয়ম-কানুন এ বিষয়ে একেবারে নিখুঁত। কোথাও কোন ত্রুটি বা ফাঁক রাখিয়া তাহা প্রস্তুত করা হয় নাই।

১১