পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কম্বলের ঘর মানে ব্যায়ামশালা। ব্যারাকের ঘরের মধ্যেই খানিকটা জায়গা কম্বলে ঘিরিয়া লইয়া বিজয় এই ব্যায়ামাগার বানাইয়াছে। দেয়ালে দুই দুইখানা বৃহৎ আয়নাও টানাইয়াছে, সম্মুখে দাঁড়াইলে পায়ের নখ হইতে চুলের ডগা পর্যন্ত তামাম শরীরটাই দেখিয়া লওয়া চলে। কয়েক জোড়া মুগুর, বারবেল, ডাম্বেল ইত্যাদি সাজসরঞ্জামও সে সংগ্রহ করিয়াছে।

 আর সংগ্রহ করিয়াছে স্বাস্থ্যান্বেষী একটি দল, যাঁহারা বিজয়ের তত্ত্বাবধানে এই কম্বলের ঘরে স্বাস্থ্যের সাধনা করিয়া থাকেন। বিরানব্বই পাউণ্ড ওজনের একটি শরীর ও বগলে একটি ল্যাঙ্গোটী লইয়া পান্নাবাবু (মিত্র) পর্যন্ত দুইবেলা এই কম্বলের ঘরে নিয়মিত প্রবেশ করিয়া থাকেন।

 কম্বলের ঘরের দুপ্‌দাপ, সোঁ-সোঁ, ফোঁস ফোঁস কানে আসিতে লাগিল। হঠাৎ ভয়ানক একটা আওয়াজে চমকাইয়া উঠিলাম, ভারী একটা বস্তু পতনের শব্দ। সঙ্গে সঙ্গে ফণীর (মজুমদার) আর্তচীৎকার—‘বাবারে গেছিরে।’

 ফণীর চীৎকারের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কে একজন ছুটিয়া আসিয়া মশারীর মধ্যে আমাকে জাপটাইয়া ধরিয়া শুইয়া পড়িল। বুকটা ছ্যাঁৎ করিয়া উঠিল, কমাণ্ডাণ্ট ব্যাটা বাঁশডলা দিতে ব্যারাকে ঢুকিল না তো?

 কহিলাম, “কি উপেনবাবু (দাস) কি হোল? ব্যাপার কি?”

 উপেনবাবু বলিলেন, “দৈত্য মুগুর ছুড়ে মেরেছে। কপাল ঘেঁষে ফসকেছে কিন্তু বুকের অর্ধেকটা রক্ত শুষে নিয়ে গেছে।”

 বিছানা ছাড়িয়া বাহির হইয়া আসিলাম এবং অকুস্থানে গিয়া উপস্থিত হইলাম। নিক্ষিপ্ত গদা যথাস্থানে ফিরিয়া গিয়াছে, কিন্তু যে-দৃশ্য দেখিলাম, তাহা জীবনে ভুলিব না।

 বলির পাঁঠা নিশ্চয় দেখিয়াছেন, কাজেই আপনাদের বুঝিতে কোন অসুবিধা হইবে না। মরা ছাগলের চোখ যদি আপনাদের দেখা থাকে, তবে দৃশ্যটি ষোল আনাই আন্দাজ করিয়া লইতে পারিবেন। ফণী তেমনি চোখমুখ লইয়া তাহার লোহার খাটিয়ার একটা পাশ চাপিয়া ধরিয়া আছে

১৯২