পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নিয়ম যত কড়াই হউক, তাহা পালনে সিপাহীদের যে খুব নিষ্ঠা আছে, তাহা মনে করিবার কান কারণ নাই। নিয়ম মানুষের প্রয়োজনেই তৈরী হয় এবং সেই মানুষের প্রয়োজনেই তা আবার ফাঁকি দেওয়া হইয়া থাকে। যেমন বর্তমান ক্ষেত্রে, সিপাইজী নাপিতকে আমার কাছে পৌঁছাইয়া দিয়াই সরিয়া পড়িল। ক্ষৌর কার্য সমাধা না হওয়া পর্যন্ত তার এখানে থাকার নির্দেশ ছিল। কার্য শেষে নাপিতকে জেল-গেট পার করিয়া দিয়া তবে তার কর্তব্য শেষ হইত। কর্তব্যের প্রতি অযথা আসক্তি সিপাইজীর ছিল না, বোধ হয় ধারে কাছে তারই মত কর্তব্য-নিযুক্ত আর কোন সিপাহীর সঙ্গে দুটা সুখ-দুঃখের আলাপ করিতে গিয়া থাকিবে।

 গালে সাবান মাখাইতে মাখাইতে নরসুন্দর বলিল,—“আপনাকে ওরা খুব ভয় করেন।”

 লোকটির আলাপ করিবার ইচ্ছা হইয়াছে, স্পষ্ট বুঝা গেল।

 জিজ্ঞাসা করিলাম—“কারা?”

 —“জেলার বাবুরা।”

 কেহ কাহাকেও যে ভয় না করে তাহা নয়। কিন্তু তাই বলিয়া সে কথাটা কেহ সর্ব সমক্ষে প্রচার করিয়া বেড়াইবে, এমনও কোন নিয়ম নাই। ধরিয়া নিলাম যে, জেলারবাবুরা আমাকে যৎপরোনাস্তি ভয় করিয়া থাকেন। কিন্তু সে কথা এ জানিল কেমন করিয়া? মনে পড়িয়া গেল যে, চাণক্যের ধুর্তের তালিকায় মানুষের পক্ষ হইতে নাপিতকেই নির্বাচিত করা হইয়াছে। লোকটা তবে আসলে নাপিতই, জেলে পা দিয়াই জেলারবাবুদের মনের এ দিকের ত্রুটিটা ধরিয়া ফেলিয়াছে।

 জিজ্ঞাসা করিলাম—“তুমি এ কথা কেমন করে জানলে?”

 —“আসবার সময় জেলারবাবু ডেকে বললেন,—ওহে দেখ, সেলে যে-বাবু আছেন তাঁকে সেরে তবে অন্য বাবুদের কাছে যাবে।”

 ব্যাপারটা ইহাতে আদৌ পরিষ্কার হইল না।

১২