পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শাস্ত্রেই আছে, যোগ্যং যোগ্যেন যুজ্যতে, আমাদের মত গ্রাম্য লোকের ভাষায়—যেমন দেবা, তেমন দেবী।

 বরাত জোরে আমাদেরই যোগ্য দুই ডাক্তার জুটিয়াছিল। বরাতের জোর আরও একটু বেশি ছিল বলিয়া দিন সাতেকের বেশি আমাদের খবরদারী করিবার সুযোগ তাঁহারা পান নাই, স্বস্থানে ফিরিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।

 হিজলী ক্যাম্পে গুলি বর্ষণের প্রতিবাদে আমরা যখন অনশন আরম্ভ করি, তখন ক্যাম্পের বড় ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না, বিশেষ প্রয়োজনে কলিকাতা গিয়াছিলেন। এদিকেও বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিল, শ’দুয়েক বন্দী অনশন আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। জলপাইগুড়িতে কমাণ্ডাণ্টের জরুরী তার গেল, প্রত্যুত্তরে দুইজন সাব-এসিস্ট্যাণ্ট সার্জন সশরীরে ক্যাম্পে আবির্ভূত হইলেন।

 একজনের নাম হর্ষ, অপরের নাম হেরম্ব, আমরা বলিতাম হিড়িম্বা ডাক্তার। হর্ষের দেহের দৈর্ঘ্য নাই, প্রায় সবটুকুই প্রস্থ। একটা গোলাকার মাংপিণ্ডের, অভাবে বস্তুর, নিম্নে দুইটা ঠ্যাং ও ঊর্দ্ধে দুইটা হাত ঝুলাইয়া দিলেই হর্ষের মূর্তি প্রায় পনর-আনা পাওয়া যায়। এর পর যদি উপরের দিকে ছোট্ট গোলাকার একটি মুণ্ড বসাইয়া দেন, তবে তো হর্ষের প্রতিমূর্তি পূর্ণাঙ্গই পাইয়া গেলেন। হর্ষ ডাক্তার চলেন আস্তে, বলেনও আস্তে, প্রায় মৌনীবাবা। অনেকের ধারণা যে, ভয়েই হর্ষ ডাক্তারের বাক্‌সংযম দেখা দিয়াছিল।

 হিড়িম্বা ডাক্তার সব দিক দিয়া হর্ষের বিপরীত। তাঁহার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দুই-ই ছিল। আকৃতিতেই শুধু নহে, প্রকৃতিতেও তিনি হিড়িম্বা ছিলেন। তিনি আসিবার আগে তাঁহার জুতার বিরাট আওয়াজ জানান দেয় যে, তিনি আসিতেছেন। চলেন যেমন, বলেনও তেমনি। হিড়িম্বা ডাক্তার ব্যারাকের এ-কোনায় ফিস্ ফিস্ করিয়া কথা বলিলে ও-কোণায় তার ঢেউ লাগে, গলার তারটি জন্মাবধিই এমনি মোটা সুরে বাঁধা।

 প্রথম দিনেই হিড়িম্বার ডাক্তারী বিদ্যার পরিচয় পাওয়া গেল। অশ্বিনী মাস্টার বলিলেন, “ডাক্তারবাবু, একবার এদিকে আসবেন।”

২০২