পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেনগুপ্তের সঙ্গে বৈঠকে সম্মিলিত হইলেন। ঘণ্টাখানেক পরে পঞ্চাননবাবুর ডাক পড়িল।

 পঞ্চাননবাবু ঘরে প্রবেশ করিতেই যুগান্তর ও অনুশীলন পার্টির নেতৃবর্গ চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন এবং একযোগে সকলেই আলোচনা-সভা ত্যাগ করিয়া বাহির হইয়া আসিলেন। কেবল মাস্টার মশায় যতীশ ঘোষ নিজ আসনে উপবিষ্ট রহিলেন। সেনগুপ্তের সঙ্গে পঞ্চাননবাবু কথাবার্তা শেষ করিয়া চলিয়া আসিলে পর নেতৃবর্গ আবার বৈঠকে প্রবেশ করেন। এতক্ষণ তাঁহারা বাহিরে গাছতলায় বসিয়া অপেক্ষা করিতেছিলেন।

 ঘটনাটি একটু বিস্তৃতভাবেই বর্ণিত হইল। দলাদলি আমাদের চরিত্রেও মাঝে মাঝে কোন প্রকৃতি ও কি আকৃতি গ্রহণ করিত, তাহার উৎকৃষ্ট একটি নিদর্শন এখানে লিপিবদ্ধ করিয়া রাখা গেল।

 ব্যাপার এইখানেই শেষ হইল না। সেনগুপ্ত কার্যশেষ করিয়া চলিয়া গেলেন। আর নেতারাও একে একে আসিয়া গোপনে পঞ্চাননবাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া গেলেন। প্রত্যেকেরই সেই একই বক্তব্য যে, উক্ত ঘটনার জন্য তিনি স্বয়ং দায়ী নহেন, দায়ী অমুক নেতা। এই সাফাই-এর প্রয়োজন ছিল। কারণ বাঙলার শ্রেষ্ঠতম বিপ্লবী নেতারও এমন অধিকার অর্জিত হয় নাই, যাহাতে পঞ্চাননবাবু সম্পর্কে এমন ব্যবহার করা চলিতে পারে। চরিত্র ও তেজস্বিতায় পঞ্চাননবাবু প্রকৃতই বিপ্লবীদের আদর্শস্থানীয় ছিলেন।

 একটু ব্যক্তিগত কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না। নেতৃবর্গের অপমানজনক আচরণের কথা দিনের বেলাতেই বিস্তারিত পঞ্চাননবাবুর নিকট শুনিয়া লইয়াছিলাম। রাত্রে শুইতে গিয়া দেখি কিছুতেই ঘুম আসিতেছে না। সমস্ত মাথাটার মধ্যে শরীরের সমস্ত বাতাস যেন আসিয়া জমা হইয়াছে, এমনি মনে হইল। রক্ত মাথায় চাপিয়াছিল, তাহাও বলিতে পারেন।

২১৫