সত্যিকার ভয়শূন্য নির্ভীক মানুষের সাক্ষাৎ আমি এতাবৎ পাই নাই। মৃত্যুকে যে জীবনেই সজ্ঞানে এই দেহে উত্তীর্ণ হইতে না পারিয়াছে, তার পক্ষে নির্ভীক বা অভী হওয়া অসম্ভব। কিন্তু এই দেহে জীবিতকালে কে মৃত্যুকে উত্তীর্ণ হইতে পারিয়াছে? মানুষের দীর্ঘদিনের ইতিহাসেও তেমন মানুষের সংখ্যা কি খুব বেশী?
চুপ করিয়াই ছিলাম, কারণ ভাবিতেছিলাম।
লোকটি জিজ্ঞাসা করিল—“উল্টো কামাবেন?”
মাথা নাড়িয়া সম্মতি দিলাম এবং পূর্ণবৎ চুপ করিয়াই রহিলাম।
“বাবু, অবলাবাবু কার নাম?”
—“অবলাবাবু? অবলাবাবু বলে তো কেউ এখানে নেই।”
—“যে-বাবুর ভাইয়ের ফাঁসি হয়েছে।”
বুঝিলাম, নাম ভুল করিয়া ফেলিয়াছে।
ভুল সংশোধন করিয়া দিলাম।
বলিলাম —“অবলাবাবু নয়, অমলবাবু। তার কথা জিজ্ঞেস করছ কেন?”
নরসুন্দর উত্তর দিল—“তাঁকে হিমালয়ে পাহাড়ের দুর্গে আটক করে রাখবে।”
বক্সা দুর্গের নামটা মনে রাখিতে পারে নাই, বলাই বাহুল্য। তাই হিমালয়ের দুর্গ বলিয়াই কাজটা চালাইয়া দিয়াছে।
এবার আমিই প্রশ্ন করিলাম—“এ কথা তুমি কোথায় শুনলে?”
—“কাল পুলিশ সাহেবের বাঙলাতে গেছলাম। সেখানে শুনলাম আপনাদের কথা হচ্ছে।”
শুনিয়া আমার মনে কোন সন্দেহ রহিল না যে, আমাকেও শীঘ্রই বক্সা দুর্গে স্থানান্তরিত হইতে হইবে, সিউড়ী জেলের মেয়াদ আমার শেষ হইয়া আসিয়াছে।
কহিলাম—“অমলবাবুকে দেখবে?”
১৪