আমি চোখের ইঙ্গিতে দারোগাবাবুকে দেখাইয়া দিলাম। অর্থাৎ ঘড়িটা আমাকে না দেখাইয়া যাঁকে দেখাইলে কাজ হইবে, তাঁকেই দেখানো কর্তব্য।
গাড়ির দিকে তাকাইলাম—দূরে ইঞ্জিনটা ফোঁস ফোঁস করিতেছে, আর প্রত্যেক কামরার জানালা দিয়া মানুষের মুণ্ডু বাহির হইয়াছে—জোড়া জোড়া চোখে ঔৎসুক্যের সার্চলাইট। ব্যাপারটা কি হইয়াছে, দূর হইতে অনুমান করিবার যথাসাধ্য চেষ্টা চলিতেছে।
আমার সঙ্কেতে কাজ হইল, স্টেশনমাস্টার দারোগাবাবুকে বলিলেন—“আমি গাড়ি আর দাঁড় করাতে পারব না। যা করবার তাড়াতাড়ি করুন।”
বলিয়া ভারিক্কি চালে হন হন করিয়া চলিয়া গেলেন। স্টেশনমাস্টার যে!
দারোগাবাবুও যে খুব আরামে ছিলেন, মনে হইল না। বেচারা কাতর সুরে নিবেদন করিলেন,—“দয়া করে আপনারা হাওড়া পর্যন্ত ইণ্টারে চলুন।”
দয়া করিবার জন্য আমি তো প্রস্তুত হইয়াই ছিলাম। কিন্তু ধরা না দিয়াই বলিলাম,—“বেশ, তারপর?”
দারোগাবাবু কণ্ঠে যথাসাধ্য অকপটতা লইয়া বলিলেন,—“কলকাতা গিয়ে ফোন করে আমি দেখব যে, আপনাদের সেকেণ্ড ক্লাশে নিতে পারি কিনা। কথা দিচ্ছি, আমি চেষ্টা করব, কিশ্বাস করুন।”
বিশ্বাস করিবার স্বভাবটা আমার বরাবরই ছিল, তাই বিশ্বাস করিতে আমার একটুও বেগ পাইতে হইল না। আসল কথা, বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন হাঙ্গামাই আমার দিক দিয়া ছিল না, এমন অবস্থাতেই নিপতিত হইয়াছিলাম।
চোখ-মুখ হইতে গাম্ভীর্যকে তখন পর্যন্ত সরিতে দিলাম না, কহিলাম,—“আচ্ছা।”
শরৎবাবুর দিকে ফিরিয়া বলিলাম,—“আসুন।”
অন্যান্য বন্ধুদের বলিলাম,—“দারোগাবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে কলকাতা গিয়ে সেকেণ্ড ক্লাশের চেষ্টা করবেন।”
১৭