পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অকৃপণতায় মানুষ ও মাটির তৃষ্ণা মিটাইয়া চলিয়াছে। শুধু কি তাই? কত পাপ, কত তাপ ধুইয়া মুছাইয়া দিয়া চলিয়াছে। ভারতবর্ষের সেই গঙ্গা, স্বর্গ হইতে মর্তের মাটিতে নামিবার পথে ধূর্জটির জটিল জটামণ্ডিত শিরে যে প্রথম আশ্রয় পায়, ভারতবর্ষের সেই গঙ্গা! ভারতবর্ষের মাতাকে, ভারতবর্ষের গঙ্গাকে মনে মনে যুক্তপাণি হইয়া প্রণাম করিলাম—মাতর্গঙ্গে।

 শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছিলাম।

 কয়েক মিনিটে, সামান্য কয়েক মিনিটে পথটা শেষ হইয়া গেল— শহরের পশ্চিম দ্বারপথে প্রবেশ করিয়া পূর্ব দুয়ারে আসিয়া পৌঁছিয়া গেলাম। একটা স্বপ্নের মধ্য দিয়া জাগিয়া পার হইয়া আসিয়াছি যেন।

 প্লাটফর্মে গিয়া দাঁড়াইলাম। দার্জিলিং মেইল ছাড়িতে এক ঘণ্টারও উপরে দেরী আছে।

 ঘণ্টাখানেক পরে দার্জিলিং মেইল তার এক ইণ্টার কামরায় আমাদের ভরিয়া লইয়া উত্তরের অভিমুখে ঊর্ধ্বশ্বাসে রাত্রির অন্ধকারে ছুটিয়া চলিল।

 ঘুমের মধ্যেই পদ্মা পার হইয়া আসিলাম এবং ঘুমের মধ্যেই শেষ রাত্রে পার্বতীপুরে গাড়ী বদল করিলাম!

 এই শীতে আরামের ঘুম হইতে জাগিতে হইল বলিয়া সন্তোষ গাঙ্গুলী ক্ষিপ্ত হইয়া গেলেন। ভদ্রলোক এম-এস-সি পরীক্ষা দিবার আগটিতে ধরা পড়েন, অর্থাৎ শিক্ষিত ব্যক্তি। আমার পাশে পাশেই চলিতেছিলেন, হঠাৎ তিনি বলিয়া উঠিলেন—“শালা!”

 চমকাইয়া উঠিলাম, এ জাতীয় গালিগালাজ তাঁর মুখে শুনিবার প্রত্যাশা করি নাই। বুঝিতে না পারিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—“কি হোল?”

 যেন অগ্নিতে ঘৃতাহুতি পড়িল, বলিয়া উঠিলেন—“কেন, স্বদেশী করেছি বলে কি চোর দায়ে ধরা পড়েছি? ঘুমোতে পারব না, এমন তো কোন কথা ছিল না। ব্যাটা অমুককে (দলের বিখ্যাত নেতার নাম করিয়া) পেলে একবার ভালো

২২