পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পিপাসায় পূর্ণবলে আকর্ষণ করিয়াছি। এই অরণ্য-জগতের আমিও একদিন একটি অধিবাসী ছিলাম, আজ তাহা পার হইয়া প্রাণ-প্রবাহের পথে মানুষের ঘাটে আসিয়া আমি থামিয়াছি। বহু বহু যুগের অতীত একই সময়ে আমার চেতনায় রোমাঞ্চ দিয়া উঠিল। আমি যেন না জানিয়াও নিশ্চিত জানিতে পারিলাম যে, আমি আফ্রিকার নয় খণ্ডকালেরও নয়—আমি সৃষ্টির আদিতে ছিলাম, বর্তমানে আছি এবং এই প্রাণের ধারাপথে ভবিষ্যতের শেষ সীমা পার হইয়াও আমার শেষ হইবে না।

 আমার প্রাণের এই রূপই আমি সেদিন দেখিতে পাইয়াছিলাম। বক্‌সা স্টেশন হইতে পাহাড়ের মাথায় বক্‌সা দুর্গ পর্যন্ত হাঁটাপথের এই অরণ্যযাত্রাটি আমার জীবনের অভিজ্ঞতার ঘরে একটি পরম সম্পদ। এই দিনের অনুভূতিটি বক্‌সা দুর্গে পৌঁছিয়া অবসর মত আমি লিখিয়া রাখিয়াছিলাম। আঠারো বছর পূর্বের সে-লেখার যেটুকু আছে, তাহারই খানিকটা আমি উদ্ধৃত করিতেছি।

 সেদিন নিজেকে যাহা জানিয়াছিলাম, অথবা যে অনুভূতিটি নিজের সম্বন্ধে আমার হইয়াছিল, তাহার অবশ্য আজ আর অপরের কাছে কোন দাম বা মূল্য নাই। তবু একজন বিপ্লবীর মনোভাবের খানিকটা আভাস হয়তো ইহাতে পাওয়া যাইতে পারে।

 সেদিন যাহা লিখিয়া রাখিয়াছিলাম তাহা এই—

 “মিনিট পনেরো হয় বক্‌সা ষ্টেশনে বন্ধুদের পিছনে ফেলিয়া আসিয়াছি। নির্জন গভীর বন চারিদিকে, পাশে শরৎবাবু।

 হঠাৎ প্রশ্ন জাগিল—কে আমি? কোথায় চলিয়াছি? কোথায় আমার ঘরবাড়ি, বাপ-মা-ভাই-বোন-স্ত্রী-কন্যা, আর আমি কিসের জন্য এই বনের মধ্যে ক্লান্ত দেহে পথ চলিয়াছি? এই দুর্ভোগ আমার কিসের জন্য? কে আমি?

 পথ চলিতে চলিতে নিজের ভিতরটায় দৃষ্টি দিলাম। দেখিলাম বুকের মধ্যে এক বিদ্রোহী মৌন হইয়া আছে—তার চোয়াল কঠিন প্রতিজ্ঞায় দৃঢ়নিবন্ধ, চোখে তার ক্ষমাশূন্য দৃষ্টি, সে-দৃষ্টি পাগলের চোখের মত অর্থহীন ও যোগীর চোখের ন্যায়

৪২