অভ্যাস ছিল না, তাই শেষের শব্দটায় দুই কাজই পাইয়া গেলাম, অর্থাৎ ‘বাবা’ বলিয়া দম ছাড়িয়া দম লইলাম।
শরৎবাবুর হো হো হাসি অট্ট হইতে অট্টতর হইল। চাক্ষুষ অবশ্য দেখিতে পাই নাই, তবু ঠিক জানি এ হাসিতে পাখীরা আচমকা গাছ ছাড়িয়া উড়িয়া ডাল বদলাইয়া বসিয়াছে, গর্তে নিদ্রিত সাপের কুণ্ডলী ক্ষণেকের জন্য শিথিল হইয়া আবার স্তিমিত হইয়াছে এবং গুহাভ্যন্তরে বিশ্রাম-সুখে লম্বমান শার্দূল থাবার উপাধান হইতে ঘাড়টা তুলিয়া আবার যথাস্থানে রক্ষা করিয়াছে। বাবা, মানুষের হাসি এই রকম হয়, শুনিরাও বিশ্বাস হয় না।
কহিলাম—“আসুন, হারমাজাদাকে দৌড়ে গিয়ে ধরি।”
শরৎবাবু অতটা রাজী ছিলেন না, তাই আর রেসের দৌড় দেখিতে ও দেখাইতে পারিলাম না।
পথটা কিছুক্ষণ হয় চেহারা বদলাইয়াছে, কচ্ছপের পিঠের মত উঁচু হইয়া আবার ঢালু হইতেছে। ঢেউ-খেলানো পথ দেখিয়া অনুমান করিলাম যে, পাহাড়ের প্রায় পারের কাছাকাছি পৌঁছিয়াছি।
একটা বাঁক ফিরিতেই দেখা পাইয়া গেলাম। ছেলেটা রাস্তার পাশে একটা ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া ঘোড়ারই গারে হেলান দিয়া দাঁড়াইয়া আছে— সিগারেটটা তখনও শেষ হয় নাই, ধূমপান মহা আরামেই চলিতেছে।
ছনম্বর ঘোড়ার সোয়ার ভদ্রলোক অশ্ব হইতে অবতরণ করিয়া অদূরে পথিপার্শে অধুনা বিশ্রাম করিতেছিলেন। এক দৃষ্টিপাতেই ভদ্রলোকের ফটোটি চোখে তুলিয়া আনিলাম। একটা মাফলারকে মাথার পাগড়ী করিয়া বন্ধন করা হইয়াছে, আলোয়ানটা মিলিটারী ব্যাজের মত বুকে ও পিঠে পৈতা হইয়া শেষের অংশটুকু কটিবন্ধের কাজে লাগিয়াছে, আর তিনি নিজে খর্বকায় হৃষ্টপুষ্ট একটি গোস্বামী হইয়া উপবিষ্ট আছেন। আড়চোখে ও সোজা চোখে দুইভাবেই গোস্বামীজীকে আবার দেখিয়া লইলাম।
বুঝিলাম যে, বিশ্রামপর্ব চলিতেছে। অশ্বারোহণে এই পথটুকু আসিতে
৪৮