পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গোস্বামীর শরীরটা বোধ হয় নাড়া-খাওয়া দধি হইতে তক্রে মানে ঘোলে আসিয়া ঠেকিয়াছে। দেখিলাম, একটু ঘায়েল হইয়াছেন। কিন্তু মাথার ও কোমরের ও-দুটো ব্যাণ্ডেজ খুলিয়া একটু ঢিলা হইতে কি বাধা ছিল? কিন্তু তখনও জানি নাই যে, তিনি বাতের রোগী, গরমটা গোস্বামীর অসহ্য হইলেও স্বাস্থ্যকর।

 ছেলেটাকে কহিলাম—“আচ্ছা ঘোড়া পেয়েছিস তো, হেঁটে এসে ধরতে পেলি। চলে তো, না ঠেলে নিতে হয়?”

 গোঁসাইয়ের মুখেও হাসি খেলিয়া গেল। গোঁসাইকে পূর্বে না দেখিয়াই মূর্তিমান স্বার্থ বলিয়া জানিয়াছিলাম, এখন দেখিয়া জানিলাম যে, তিনি রসিকও বটে। ঘোড়াটার কান নড়িয়া উঠিল, হয়তো আমার অসম্মানজনক উক্তিটিকে কানের বাতাস দিয়া কর্ণপ্রবেশ পথ হইতে দূরে উড়াইয়া দিল। ঘাড় বাঁকাইয়া বক্তাকে মানে আমাকে একবার দেখিয়াও লইল। হাসিয়া উঠিবে না তো? না, ঘোড়াটা শরৎবাবুর অট্টহাসি বা গোঁসাইয়ের মৃদু হাসি কোনটাই দিল না। বাঁচা গেল।

 ঘোড়ার কান নাড়া দেখিয়া ইচ্ছা হইল যে, ছেলেটার কানটাও টানিয়া একটু নাড়াইয়া দেই, কিন্তু সামলাইয়া গেলাম। গন্ধের ভয়ে পিছাইয়া আসিলাম— কে জানে, গন্ধটা যদি হাতে অক্ষয় হইয়া লাগিয়া থাকে। পাকা রং থাকিতে পারে, আর পাকা গন্ধ থাকিতে পারিবে না, এ কোন কাজের কথা নয়।

 শরবাবুকে কহিলাম—“চলে আসুন, আবার সিগারেট চেয়ে বসবে। দেখছেন না, আস্ত শয়তান, কি রকম মিটিমিটি তাকাচ্ছে।”

 ছেলেটাকে কহিলাম—“যা, আজ বেঁচে গেলি, সিগারেটের জন্য যে কান ধরে তোকে ওঠ-বস করাইনি, এ তোর চোদ্দপুরুষের ভাগ্য জানবি। মনে রাখিস, ব্যাটা অকৃতজ্ঞ।”

 বলিয়া আড়চোখে চাহিয়া দোখলাম গোস্বামীর মোটা মুখে মৃদু হাস্য ঝিলিক দিতেছে। ব্যাটা বকধার্মিক, চুপ করিয়া নির্বিকারভাবে বসিয়া আছেন, মুখের কাছে পাইলে দেখিতেছি কিছুই ছাড়েন না।

৪৯