পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 জলে হাত দিয়া আমারও ঐ রকম একটা আরামের নিঃশ্বাস বাহির হইল, এত ঠাণ্ডা! বরফ-গলা জল, পাথর কাটিয়া আসিতেছে, নদী হইয়া পথের দুধারে অকৃপণ হাতে প্রাণের পানীয় পরিবেশন করিয়া যাইবে— একখানি কল্যাণময়ী বধূমূর্তি চোখের সম্মুখে দেখা দিল। অথচ এ সাগরের অভিসারে বাহির হইয়াছে। এ এক অদ্ভুত অভিসারিকা—যে প্রেম একে আকর্ষণ করিয়া পিত্রালয় হইতে একাকী পথে বাহির করিল, তাহাতে সকলের জন্য কল্যাণ কেমন করিয়া স্থান পাইল?

 মানুষের প্রেম-অভিসার এ রকম কল্যাণবাহী হয় না কেন? সে-প্রেম গোপন, একাকী পথচারী, দুইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিয়া যায় কি কারণে? মানুষের প্রেম বড় জোর গৃহের শান্ত প্রদীপশিখা হয়, নয় মশাল হইয়া জ্বলিয়া গৃহে আগুন ধরায়।

 আমার সামনের এই অভিসারিকা পর্বতকন্যার এত প্রাণ, এত চাঞ্চল্য এবং এত প্রচণ্ড গতিবেগ—অথচ গায়ে হাত দিয়া দেখি এর সমস্ত শরীর কত শীতল, কোন তাপ-জ্বালা এর দেহে নাই। মানুষের দেহ-মনের গতিও যত, তাপ-জ্বালাও তত—প্রচণ্ড গতির সঙ্গে তেমনি প্রগাঢ় শান্ত শীতলতাকে এর মত বহন করিতে তো মানুষ পায় নাই।

 ঝরণার হাত হইতে শরৎবাবুকে এক রকম ছিনাইয়া লইয়া অবশেষে আবার পথ ধরিলাম।

 ফোর্ট কতদূর ধারণা ছিল না, তবে বুঝিতে পারিয়াছিলাম যে, পথ প্রায় শেষ করিয়া আনিয়াছি। আর মিনিট কুড়ি পথ গেলেই বক্সার পোষ্ট অফিসঘর। সেখানে পৌঁছিবার পূর্বেই সামান্য একটু ঘটনা ঘটিয়া গেল, তার উল্লেখ থাকা দরকার। কারণ, পুলিশ কর্মচারীও মানুষ, শত হউক তারাও এ-দেশেরই লোক, এই কথার প্রমাণ এই ঘটনাতে পাওয়া যাইবে।

 পিছনে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ পাইলাম। না দেখিয়াও দেখিতে পাইলাম, ছ’ নম্বর ঘোড়ার সওয়ার গোস্বামী প্রভু আসিতেছেন। কিন্তু

৫৪