পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমাদের এই সংখ্যাটা শেষ পর্যন্ত চার হাজার অবধি উঠিয়াছিল। আর যদি সর্বসাকুল্যে ধরা যায়, অর্থাৎ যাহাদের জেলে না আনিয়া লাল সবুজ ইত্যাদি কার্ড দিয়া মার্কা মারিয়া বাহিরে চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হইয়াছিল, তাহাদের সংখ্যাটা যোগ করিলে আমরা প্রায় লাখ খানেকের কাছে গিয়া পৌঁছিতাম। প্রসঙ্গতঃ একটা কথা উল্লেখ করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম না। বকসা গিয়া দেখিলাম, বিপ্লবীদের প্রায় পনর-আনাই বাঙাল। বাঙলার বৃহত্তর ক্ষেত্রেও এই সংখ্যানুপাতই লক্ষিত হইবে। বাঙলার বিপ্লবীদের প্রায় পনর-আনাই কেন পূর্ব বাঙালা হইতে আসিল, ইহার কারণ বিশ্লেষণ বিশেষজ্ঞ ও ঐতিহাসিকের হাতে ছাড়িয়া দিলাম। আমি কেবল একটা তথ্যেরই ইঙ্গিত প্রসঙ্গত করিয়া গেলাম।

 স্থান, কাল, পাত্র লইয়াই নাকি ইতিহাস। অতএব স্থান সম্বন্ধে কিছু বলা অবশ্যই উচিত। স্থানশূন্য ঘটনা আর বৃন্তহীন পুষ্প প্রায় একই গোছের ব্যাপার। স্থানটিই বোঁটার মত ঘটনা ও ইতিহাসকে ধারণ করিয়া থাকে। আর, সময় ও স্থান যে হরগৌরীর ন্যায় নিত্যসম্বন্ধে যুক্ত, একথা শুধু দার্শনিকেই নয় বৈজ্ঞানিকেরাও বলিয়া থাকেন।

 প্রথমেই কালের একটু পরিচয় দেওয়া যাইতেছে। গান্ধীজীর আইন-অমান্যের কাল সেটা। অর্থাৎ ভারতবর্ষের তামাম আকাশ সেদিন আইন-অমান্যের ঘন মেঘে আবৃত। আর সে-আকাশের পূর্বদিগন্তে মাঝে মাঝে বিপ্লবী বিদ্যুতের খাড়ার ঝিলিক। এক কথায়, বাঙলার আকাশে সেদিন মেঘ-বিদ্যুৎ-ঝড়ের প্রলয়ঙ্কর প্রকাশ। এই দিনই আমাদিগকে বক্সাদুর্গে আনিয়া মজুত করা হইয়াছিল।

 অতঃপর স্থানের ক্ষেত্রে আসা যাইতেছে। তিনদিকে তিনটি পাহাড়, মাঝখানে এই বক্সা দুর্গ পাথরে তৈরী। পূর্বে ও পশ্চিমে তিনটি ঝরণা। বাঙলা ও ভূটানের সীমান্তে ঘাঁটি রক্ষার জন্য স্থান-নির্বাচন ভালোই হইয়াছে। কিন্তু মন একটু সঙ্কুচিত হইয়া গেল। দূর হইতে যে হিমালয় দেখিয়াছিলাম, সে হিমালয়

৬৩