টুপি মাথায় ফিনী সাহেব প্রবেশ করিলেন, পিছনে ফাইল বগলে সাহেবের গুর্খা বেয়ারা। সাহেব গট্গট করিয়া বারান্দা ধরিয়া আগাইয়া গেলেন, যাইবার পথে একবার অপাঙ্গের তির্যক দৃষ্টিতে আমাদিগকে ছুঁইয়া গেলেন। একেবারে শেষ প্রান্তে পূর্বের কামরায় গিয়া তিনি প্রবেশ করিলেন এবং অদৃশ্য হইলেন। লোকজনের হাবভাব এবং প্রভুর গাম্ভীর্য দর্শনে আমরাও বিমর্ষ হইয়া পড়িলাম। ঐ যাকে বলে ঘাবড়াইয়া যাওয়া, তাই।
শরৎবাবু ফেউয়ের মত অথবা জোঁকের মত আমার সঙ্গে লাগিয়াই থাকিতেন, জিজ্ঞাসা করিলেন—“ব্যাটাটা কে?”
ভাষা শুনিয়া পুলকিত হইলাম। কহিলাম, “আস্তে, কেউ শুনে ফেলবে?”
এমন সময় বেঁটে খাটো এক ভদ্রলোক এক গাল সাদাকালো দাড়ি লইয়া পাশের একটা ঘর হইতে নির্গত হইয়া আসিলেন এবং আমাদের সম্মুখ দিয়া সাহেবের কামরার অভিমুখে হেলিতে দুলিতে আগাইয়া চলিলেন।
ডাকিয়া কহিলাম—“মশায়, সাহেবটি কে?”
মহাশয় থামিয়া দাঁড়াইলেন এবং উত্তর দিলেন—“থাকলেই চিনতে পারবেন।” বলিয়া চোখটাকে কুৎ-কুৎ করিয়া নাচাইয়া লইলেন।
যেটুকু ঘাই দিলেন, তাতেই বুঝাইয়া দিলেন যে, তিনি গভীর জলের মৎস। এ অনুমান পরে নানাভাবেই সমর্থিত হইয়াছিল।
রসিকতাকে আমল না দিয়াই বলিলাম—“কমাণ্ডাণ্ট বুঝি?”
—“চিনতে পেরেছেন দেখছি। হাঁ, কমাণ্ডাণ্ট মিঃ ফিনী।”
—“কর্নেল?”
চোখের দৃষ্টিটাকে স্থির রাহিয়া ভদ্রলোক তাঁর ভাঙ্গা গলায় বলিলেন,—“কর্ণেল কি বলছেন, চৌদ্দ পুরুষে কেউ মিলিটারীতে যায়নি। পাদ্রীর পুত্র” বলিয়া তিনি আগাইয়া গেলেন।
শরৎবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলাম—“ব্যাপার কেমন বুঝছেন?”
৬৮