পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 একটির পর একটি এই রকমের এবং আরও অন্যান্য রকমের অনেকগুলি ঢেউয়ের ধাক্কায় বকসা ফোর্টের কমাণ্ডাণ্ট সাহেবের মেজাজ, ঔদ্ধত্য ও বজ্জাতির রুক্ষ কাঠিন্যটুকু মসৃণ করিয়া লওয়ার পর তবে ক্যাম্পের বন্দিদের সঙ্গে কমাণ্ডাণ্টের একটা সহজ স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপিত হইয়াছিল। কয়েকজনের সঙ্গে তো তাঁর বন্ধুত্ব পর্যন্ত হইয়া গিয়াছিল!


 নিজের কথা বলা নাকি রুচি-বিগর্হিত।

 কিন্তু জিজ্ঞাসা করি যে, আমার কথা আমি যদি না বলি, তবে এমন কোন বান্ধব আছে যে, আমাদের মত রামা-শ্যামাদের কথা বলিবার জন্য আগাইয়া আসিবে? বেশ, তর্কের খাতিরে ধরিয়া নিলাম যে, আমাদের ঢাক পিটিবার মত লোকের অভাব হইবে না। তবে আবার জিজ্ঞাসা করি যে, আমার কথা আমি যেমন মমতা ও আন্তরিকতা লইয়া বলিব, অর্থাৎ আমার জন্য আমার যে-মায়া ও পক্ষপাতিত্ব আছে, তাহা অপরের কাছে প্রত্যাশা করা যায় কি? যায় না। অতএব, নিজের কথা নিজেরই বলিতে হয়।

 ব্যাকরণেও এই ব্যবহারের সমর্থন আছে। পুরুষ-বিচারে ব্যাকরণে আমাকে মানে নিজেকে দেওয়া হইয়াছে ‘উত্তম পুরুষ’-এর আসন, সম্মুখে উপস্থিত আছেন বলিয়াই তোমাদের মানে আপনাদের দেওয়া হইয়াছে ‘মধ্যম পুরুষ’-এর আসন, আর বাদবাকী যাবতীয়কে ঠেলিয়া দেওয়া হইয়াছে একেবারে থার্ড ক্লাশে অর্থাৎ “তৃতীয় পুরুষ”-এর পংক্তিতে। এখন, পুরুষ বা পাত্র সম্বন্ধে বলিতে গিয়া যদি নিজেকেই বাদ দিতে হয়, তবে যে পুরুষের মধ্যে সেরা পুরুষ সেই “উত্তম পুরুষ” টিই বাদ পড়িয়া যায়। ইহারই অন্য নাম শিবহীন যজ্ঞ।

 শুধু ব্যাকরণ কেন? ধর্মশাস্ত্রতো আদর্শ আচরণের অভিধান ও বিধান একাধারে। গীতা ধর্মশাস্ত্র, ইহা নিশ্চয় আপনারা মানিয়া থাকেন। গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ কি বলিয়াছেন? তিনি খোলাখুলিই বলিয়াছেন, “শোন অর্জুন!

৭৪