পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অমলেন্দু নামটা আমার, কাজেই আমাকেই যে সভাপতি হইবার জন্য প্রস্তাব করা হইয়াছে, এই বিষয়ে আমার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু কেন? ব্যাপার কি? ইত্যাদি একদল প্রশ্ন মগজের মধ্যে কিলবিল করিয়া উঠিল। বাঙলার বিপ্লবীদের যাঁহারা নেতা চালক ও বাহক তাঁহারা প্রায় সকলেই এই সভায় উপস্থিত রহিয়াছেন, তত্রাচ আমার সভাপতি হইতে হইবে কেন? আজ হয়তো মতবিরোধ রহিয়াছে, কিন্তু দীর্ঘ ষোল সতের বছর যাঁহাদের দ্বারা চালিত হইয়াছি, তাঁহারা উপস্থিত থাকিতে আমি সভাপতি? ইত্যাদি প্রশ্ন মনে জাগিতে ও আমার সিদ্ধান্ত করিতে আমি বড় জোর পাঁচ ছয় সেকেণ্ড সময় লইয়াছিলাম।

 তারপর গিয়া সভাপতির চেয়ারে স্থান লইলাম, অর্থাৎ তাহা অলঙ্কৃত করিলাম। আমি যেভাবে ঢুকিয়াছি এবং সভাপতির আসনে গিয়া বসিয়াছি, তাহাতে মনে হইতে পারিত যে, সভাপতির আসন আমারই জন্য ঠিক করা ছিল, আমি সভায় প্রবেশ করিয়া তাই সেই নির্দিষ্ট চেয়ারে সোজা গিয়া আসন লইয়াছি।

 আমি আসিয়াছিলাম মজা দেখিতে, শেষে আমাকেই হইতে হইল সেই সভার সভাপতি। বরাতে যদি পাওয়ানা থাকে, তাহা আটকায় কার সাধ্য। হিন্দীতে আছে, তিনি যখন দেতা হ্যায়, তখন নাকি ছপ্পর ফুঁড়কেই দেতা হ্যায়।

 ব্যাপারটা এই, মধুদা, প্রতুলবাবু, মহারাজ প্রমুখ নেতাদের নাম একে একে প্রস্তাব করা হয় এবং একে একে সকলেই সভাপতির পদ প্রত্যাখ্যান করেন। এই রকম মারাত্মক সভার মারাত্মক পরিণতির দায়িত্ব লইতে কেহই প্রস্তুত ছিলেন না। এই সময়ে মূর্তিমান সেই উত্তম পুরুষের প্রবেশ এবং সভার সিংহাসন লাভ। ভূপতিদাই শ্বেত-হস্তীর কাজ করিলেন, প্রস্তাবের শুঁড়ে তুলিয়া উত্তম পুরুষটিকে সিংহাসনে বসাইয়া দিলেন। চেয়ারে বসিয়া স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে নিজেকে মনে মনে কবিতা শুনাইলাম—কি কুক্ষণে শূর্পনখা আইলি এ ঘোর দন্তক অরণ্যে?

৭৮