পাতা:বক্সা ক্যাম্প.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহাতে আলোকিত থাকিত। অন্যান্য স্থানেও আলোর অনুরূপ ব্যবস্থা ছিল। ভোর হইলে বাতিওয়ালা ছেলে তিনটি আসিয়া এগুলি নামাইয়া লইয়া যাইত।

 এই ক্ষেত্রটুকুর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণেতে একটি রবার বৃক্ষ। বৃক্ষটিকে বটগাছ বলিয়াই জানিয়াছিলাম, কিন্তু জ্ঞানী লোকের অভাব ছিল না, তাঁহারা জ্ঞানাঞ্জন-শলাকা প্রয়োগ করিলে চক্ষু খুলিয়া গেল এবং জানিতে পারিলাম যে, এ বটবৃক্ষ নহে, রবার গাছ। কি ঠকানই এতদিন ঠকাইয়াছে, আত্মপরিচয় গোপন করিয়া বটবংশের মর্যাদা আদায় করিয়া লইয়াছে।

 এই গাছটার সঙ্গে আমাদের অনেকগুলি দিনরাত্রির বহু স্মৃতি আলো-অন্ধকারের মত জড়াইয়া আছে। এই গাছেই টেনাবাবুর প্রকাণ্ড মোরগ দুইটি ভোরে খাঁচা খোলা পাইয়াই উড়িয়া আসিয়া চড়িয়া বসিত! একটি উঁচু ডালে রঙ্গীন ও দীর্ঘ লেজ ঝুলাইয়া সারাদিনমান কাটাইয়া দিত, সন্ধ্যায় অনেক সাধ্যসাধনা ও কৌশলের আশ্রয় লইয়া তবে তাহাদিকে নামাইয়া আনিতে হইত। রঙ্গীন মোরগ দুইটিকে গাছের ডালে ময়ূর বলিয়া ভ্রম হইত। এ গাছ হইতে একদিন জ্যোছনারাত্রে সতীশবাবুর প্রায় ঘাড়ের উপর ভূত লাফাইয়া পড়িয়াছিল। ব্যাপারটা সংক্ষেপে এই—

 নীচে পাচনম্বর ব্যারাকে সন্ধ্যার পরে জলসাগোছের একটা অনুষ্ঠান চলিতেছিল, সকলেই সেখানে গিয়া জমায়েত হইয়াছেন। রাত্রিটা ছিল পূর্ণিমা। সারা আকাশ জ্যোছনায় ভাসিয়া গিয়াছে, অথচ আমাদের আকাশে চাঁদ ছিল না, কারণ পূবের পাহাড়টা তাকে আড়াল করিয়া রাখিয়াছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই পূবের পাহাড়টার মাথা আলোকিত হইয়া উঠিল, বুঝা গেল চাঁদ অনেকটা আগাইয়াছে। বন্ধুবর কালীপদ (গুহরায়) এতটা ধৈর্য ধরিবার জন্য রাজী ছিলেন না। পাহাড়ের ওধারে যে-চাঁদ আসিয়া গিয়াছে, তাহাকে আগাইয়া অভ্যর্থনা করিবার কবি-প্রেরণা তাঁকে পাইয়া বসিল। কেডস্ পায়েই তিনি রবার গাছে চড়িয়া বসিলেন। হাত চৌদ্দ-পনর উঁচু ডালকে ঘোড়া বানাইয়া তিনি উপবিষ্ট হইলেন এবং অপেক্ষা করিতে লাগিলেন।

৮৬