পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪ নবাব অন্তঃপুরে প্রত্যাগমন করিয়া আবার শৈবলিনীকে ডাকাইলেন । বলিলেন, “এক্ষণে তোমার স্বামীকে মুক্ত করা হইল না। ইংরেজের তাহাদিগকে লইয়া কলিকাতায় যাত্র করিয়াছে। মুরশিদাবাদে হুকুম পাঠাইলাম, সেখানে তাহাদিগকে ধরিবে । তুমি ”س--iaهای শৈবলিনী হাত খোড় করিয়া কহিল, “বাচাল স্ত্রীলোককে মার্জন করুন -এখন লোক পঠাইলে লর যায় না কি ? নবাব । ইংরেজদিগকে ধর। অল্প লোকের কৰ্ম্ম নহে । অধিক লোক সশস্ত্রে পাঠাইতে হইলে, বড় নৌকা চাই। ধরিতে ধরিতে তাহার। মুরশিদাবাদ পৌছিবে । বিশেষ যুদ্ধের উদ্যোগ দেখিয় কি জানি, যদি ইংরেজের আগে বন্দীদিগকে মারিয়া ফেলে মুরশিদাবাদে সুচতুর কৰ্ম্মচারী সকল অাছে, তাহার কলে-কৌশলে ধরিবে । , শৈবলিনী বুঝিল যে তাহার স্বন্দর মুখখনিতে অনেক উপকার হইয়াছে। নবাব তাহার স্থলর মুখখানি দেখিয়া তাহার সকল কথা বিশ্বাস করিয়াছেন এবং তাহার প্রতি বিশেষ দয়া প্রকাশ করিতেছেন নহিলে এত কথা বুঝাইয়। বলিবেন কেন ? শৈবলিনী সাহস পাইরা আবার হাতযোড় করিল ! বলিল, “ষদি এ অনাথাকে এত দয়া করিয়াছেন, তবে আর একটি ভিক্ষা–মার্জন করুন | আমীর স্বামীর উদ্ধার অতি সহজ –তিনি স্বরং বীরপুরুষ । র্তাহার হাতে অস্ত্র থাকিলে, তাহাকে ইংরেজ কয়েদ করিতে পারিত না ; তিনি যদি এখন হাতিয়ার পান, তবে তাহাকে কেন্স কয়েদ রাখিতে পরিবে না ; যদি কেহ তাহাকে অস্ত্ৰ দিয়া আসিতে পারে, তবে তিনি স্বয়ং মুক্ত হইতে পরিবেন, সঙ্গীদিগকে মুক্ত করিতে পারিবেন ।” নবাব হাদিলেন ; বলিলেন, “তুমি বালিক, ইংরেজ কি, তাহ জান ন · কে তাহাকে সে ইংরেজের নৌকায় উঠিয়া অস্ত্ৰ দিয়া আদিবে ?” শৈবলিনী মুখ নত করিয়া অঙ্কুটস্বরে বলিলেন, “যদি হুকুম হয়,যদি নৌক পাই, তবে আমিই যাইব ।” নবাব উচ্চহাস্ত করিলেন । হাসি শুনিয়া শৈবলিনী ক্র কুঞ্চিত করিল ! বলিল, “প্ৰভু ! না পারি, আমি মরিব—তাহাতে কাহারও ক্ষতি নাই, কিন্তু যদি পারি, তবে আমারও কার্য্যসিদ্ধি হইবে, আপনারও কাৰ্য্যসিদ্ধি হইবে ।” নবাব শৈবলিনীর কুঞ্চিত ভ্ৰশোভিত মুখমণ্ডল দেখিয়া বুঝিলেন, এ সামান্ত স্ত্রীলোক নহে। ভাবিলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মরে মরুক, আমার ক্ষতি কি ? যদি পারে ভালই, নহিলে মুরশিদাবাদে মহম্মদ তকি কার্যসিদ্ধি শৈবলিনীকে বলিলেন, “তুমি কি একাই যাইবে ?" শৈ । স্ত্রীলোক, এক যাইতে পারিব না । যদি দয়া করেন, তবে সঙ্গে এক জন দাসী, এক জন রক্ষক আজ্ঞা করিয়া দিন । নবাব চিন্ত করিয়া মণীবৃদিন নামে এক জন বিশ্বাসী, বলিষ্ঠ এবং সাহসী খোজাকে ডাকাইলেন । সে আসিয়া প্রণত হইল । নবাব তাহাকে বলিলেন, “এই স্ত্রীলোককে সঙ্গে লও এবং এক জন হিন্দু বাদী সঙ্গে লও। ইনি সে হাতিয়ার লইতে বলেন, তাহও লও । নৌকার দরোগাব নিকট হইতে একখানি দ্রুতগামী ছিপ লও । এষ্ট সকল লইয়। এইক্ষণেই মুরশিদাবাদ অভিমুখে যাত্রা কর " মসাবৃদিন জিজ্ঞাসা করিল, “কোন কাৰ্য্য উদ্ধার করিতে হুইবে ?” নবাব । ইনি যাহা বলিবেন, তাহাই করিবে । বেগমদিগের মত ইহাকে মান্ত করিবে । যদি দলনী বেগমের সাক্ষাং পাও, সঙ্গে লইয়া আসিবে । পলে উভসে নববকে স্থারীতি অভিবাদন করিয়৷ বিদায় হইল । খোঞ্জ যেরূপ করিল, শৈবলিনী দেখিয়া দেখিয়া, সেইরূপ মাটী ছুইয়। পিছু হটয়৷ সেলাম করিল । নবাব হাসিলেন । নবাব গমনকালে বলিলেন, “বিবি, স্মরণ রাখিও, কখনও যদি মুস্কিলে পড়, তবে মীর কাসেমের কাছে অসিও " শৈবলিনী পুনৰ্ব্বার সেলাম করিল। মনে মনে বলিল, “আসিব বৈ কি ! হয় ত রূপসীর সঙ্গে স্বামী লইয়া দরবার করিবার জন্য তোমার কাছে আসিব ।” মসীবুদিন পরিচারিক ও নৌকা সংগ্ৰহ করিল এবং শৈবলিনীর কথামত বন্দুক, গুলী বারুদ, পিস্তল, তরবারি ও ছুরি সংগ্ৰহ করিল। মসীবুদিন সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করিতে পারিল না যে, এ সকল কি হইবে ? মনে মনে করিল যে, এ দোসরা চাদ সুলতান । সেষ্ট রাত্রেই তাহারা নৌকারোহণ করিয়া, যাত্রা করিল । " * . -*