পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tԵ চন্দ্রশেখর হাসিয়া একখণ্ড বৃহৎ প্রস্তর এক হস্তে তুলিয়া দুরে নিক্ষেপ করিলেন । রমানন্দ স্বামী বলিলেন, "উত্তম । শৈবলিনীর নিকটে গিয়া অন্তরালে বসিয়া থাক, শৈবলিনী আগত প্রায় বাতায় সাহায্য না পাইলে স্ত্রীহত্য হইবে । নিকটে এক গুহা আছে, আমি তাহার পথ চিনি । আমি যখন বলিব, তখন তুমি শৈবলিনীকে ক্রোড়ে লইয়া আমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ অসিও " চ। এখনই ঘোরতর অন্ধকাল হুইবে, পথ দেখিব কি প্রকারে ? র। আমি নিকটই থাকিব । অমর এই দণ্ড৷ গ্রভাগ তোমার মুষ্টিমধ্যে দিব ! অপর ভাগ আমার হস্তে থাকিবে । শৈবলিনীকে গুহার রাখিয় চন্দ্রশেখর বাহিরে আসিলে রমানন্দ স্বামী মনে মনে ভাবিলেন, “আমি এত কাল সৰ্ব্বশাস্ত্র অপাসুন করিলাম, সৰ্ব্বপ্রকার মনুষ্যের সহিত অলিপি করিলাম, কিন্তু সকলই বৃথা । এই বালিকার মনের কথ। বুঝিতে পারিলাম না । এ সমুদ্রের কি তল নাই ?” এই ভাবিয়। চন্দ্রশেখরকে বললেন, “নিকটে এক পাৰ্ব্বত মঠ আছে, সেইখানে অল্প গিয়া বিশ্রাম কর । শৈবলিনার পক্ষে সংকৰ্ত্তব্য সাধিত হইলে, তুমি পুনরপি যবনীর অনুসরণ করিবে । মনে জানিও, পরহিত ভিন্ন তোমার ব্রত নাই । শৈবলিনার জন্য চিস্তা করিও না, আমি এখানে রছিলাম । কিন্তু তুমি আমার অনুমতি ব্যতীত শৈবলিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিও না। তুমি যদি আমার মতে কার্য্য কর, তবে শৈবলিনীর পরমোপকার হইতে পারে ।” এই কথার পর চন্দ্রশেখর বিদায় হইলেন । রমানন্দ স্বামী তাহার পর অন্ধকারে অলক্ষ্যে গুহামপ্যে প্রবেশ করিলেন । তাহার পর যাহা ঘটিল, পাঠক সকলই জানেন । উন্মাদগ্ৰস্ত শৈবলিনীকে চন্দ্রশেখর সেই মঠে রম! নন্দ স্বামীর নিকটে লষ্টয়া গেলেন । কাদিয়া বলিলেন, “গুরুদেব ! এ কি করিলে ?” রমানন্দ স্বামী শৈবলিনার অবস্থা সবিশেষ পর্য্য বেক্ষণ করিয়া ঈষৎ হাস্ত করিয়া কহিলেন, “ভালই হইয়াছে। চিস্ত করিও না । তুমি এইখানে দুই এক দিন বিশ্রাম কর। পরে ইহাকে সঙ্গে করিয়৷ স্বদেশে লইয়া যাও । যে গৃহে ইনি বাস করিতেন, সেই গৃহে ইহাকে রাখিও । যাহার। ইহার সঙ্গী ছিলেন, তাহাদিগকে সৰ্ব্বদ ইহার কাছে থাকিতে বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী অনুরোধ করিও । প্রতাপকে সেখানে মধ্যে মধ্যে আসিতে বলিও । আমিও পশ্চাৎ যাইতেছি ।” গুরুর আদেশমত চন্দ্রশেখর শৈবলিনীকে গৃহে আনিলেন । দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ হুকুম ইংরেজের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ হইল। মীর কাসেমের অপঃপতন আরম্ভ হইল । মীর কাসেম প্রথমেই কাটোয়ার যুদ্ধে হারিলেন । তাহার পর গুবৃগন্‌ খার অবিশ্বাসিত প্রকাশ পাইতে লাগিল । নবাবের যে ভরসা ছিল, সে ভরসা নিৰ্ব্বাণ হইল । নবাবের এই সময়ে বুদ্ধির বিকৃতি জন্মিতে লাগিল । বন্দী ইংরেজ দিগকে বধ করিবার মানস করিলেন । অন্তান্ত সকলের প্রতি অহিতচরণ করিতে লাগিলেন । এই সময়ে মহম্মদ তকির প্রেরিত দলনীর সংবাদ পৌছিল । জলপ্ত অগ্নিতে তাহুতি পড়িল । ইংরেজের তাবিশ্বাসী হইয়াছে -সেনাপতি অবিশ্বাসীবোল হইতেছে--রাজলক্ষ্মী বিশ্বাসঘাতিনী--আবার দলনাও বিশ্বাসঘাতিন ? আর সহিল না । মীর কাসেম মহম্মদ তকিকে লিখিলেন, “দলনীকে এখানে পঠাইবার প্রয়োজন নাই । তাহাকে সেইখানে বিষপান করাইয়। বধ করিও ।” - মহম্মদ তকি স্বহস্তে বিষের পাত্র লইয়া দলনীর নিকটে গেল। মহম্মদ তকিকে তাহার নিকটে দেখিয় দলনী বিস্থিত হইলেন । ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন, “এ কি গ৷ সাহেব, আমাকে বেইজ্জৎ করিতেছেন কেন ?" মহম্মদ তকি কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, “কপাল ! নবাব আপনার প্রতি অপ্রসন্ন ৷” দলনী হাসিয়া বলিলেন, “আপনাকে কে বলিল ?” মহম্মদ তকি বলিলেন, “ন। বিশ্বাস করেন, পরওয়ানা দেখুন ।” দ । তবে আপনি পরওয়ানা পড়িতে পারেন নাই । .." মহম্মদ ভকি দলনীকে নবাবের সহিমোহরের পরওয়ান পড়িতে দিলেন। দলনী পরওয়ানা পড়িয়। হাসিয়া দূরে নিক্ষেপ করিলেন। বলিলেন, “এ জাল । আমার সঙ্গে এ রহস্ত কেন ? মরিবে, সেই জন্য ?” মহ । আপনি ভীত হইবেন না । আমি আপনাকে রক্ষা করিতে পারি।