পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& e বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী .." . • ইহা শুনিয়া যদি কেহ প্রতিজ্ঞ করেন, কখনও পরের উপবাসনিবারণার্থ কাষ্ঠীহরণে যাইবেন না, তবে তিনি পামর—এই যাত্রীদিগের ন্যায় পামর । আত্মোপকারীকে বনবাসে বিসর্জ্জন করা যাহাদিগের প্রকৃতি, তাহারা চিরকাল আত্মোপকারীকে বনবাসে দিবে – কিন্তু যতবার বনবাসিত করুক না কেন, পরের কাষ্ঠাহরণ করা যাহার স্বভাব, সে পুনর্ব্বার পরের কাষ্ঠাহরণে যাইবে। তুমি অধম – তাই বলিয়া আমি উত্তম হইবো না কেন? m**mam তৃতীয় পরিচ্ছেদ বিজনে Like a veil, Which is withdrawn, would but disclose the frown Of one who hates us, so the night was shown And grimly daikled o'er their faces pale And hopeless eyes.” –Don Juan. যে স্থানে নবকুমারকে ত্যাগ করিয়া যাত্রীর চলিয়া যান, তাহার অনতিদূরে দৌলতপুর ও দরিয়াপুর নামে দুই ক্ষুদ্র গ্রাম এক্ষণে দৃষ্ট হয়। পরন্তু যে সময়ের বর্ণনায় আমরা প্রবৃত্ত হইয়াছি, সে সময়ে তথায় মনুষ্যবসতির কোন চিহ্ন ছিল না ; অরণ্যময় মাত্র । কিন্তু বাঙ্গালাদেশের অন্যত্র ভূমি যেরূপ সচরাচর অনুদঘাতিনী, এ প্রদেশে সেরূপ নহে। রসুলপুরের মুখ হইতে সুবর্ণ রেখা পর্য্যস্তু অবাধে কয়েক যোজন পথ ব্যাপিত করিয়া এক বালকাস্ত পশ্রেণী বিরাজিত আছে। আর কিছু উচ্চ হুইলে ঐ বালুকাস্ত পশ্রেণীকে বালুক৮ ময় ক্ষুদ্র পৰ্ব্বতশ্রেণী বলা যাইতে পারিত। এক্ষণে লোকে উহাকে বালিয়াড়ি বলে । ঐ সকল বালিয়াড়ির ধবল শিখরমালা মধ্যাহ্নস্থৰ্য্যকিরণে দূর হইতে অপূৰ্ব্ব প্রভাবিশিষ্ট দেখায়। উহার উপর উচ্চ বৃক্ষ জন্মে না । স্ত পতলে সামান্ত ক্ষুদ্র বন জন্মিয়া থাকে, কিন্তু মধ্যদেশে বা শিরোভাগে প্রায়ই ছায়াশূন্ত৷ ধবলশোভা বিরাজ করিতে থাকে। অধোভাগমগুনকারী বৃক্ষাদির মধ্যে ঝাটি, বন-ঝাউ এবং বনপুপই অধিক । এইরূপ অপ্রফুল্লকর স্থানে নৰকুমার সঙ্গিগণ কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়াছিলেন। তিনি প্রথমে কাষ্ঠভার লইয়া নদীতীরে আসিয়া নৌকা দেখিলেন না ; তখন র্তাহার জঙ্কস্থাৎ অভ্যন্ত ভয়ুসঞ্চার হইল বটে, কিন্তু সঙ্গিগণ যে র্তাহাকে একেবারে পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছে, এমন বোধ হইল না। - বিবেচনা করিলেন, জলোচ্ছ্বাসে সৈকতভূমি প্লাবিত হওয়ায় তাহারা নিকটস্থ অন্য কোন স্থানে নৌকা . রক্ষা করিয়াছেন, শীঘ্র তাহাকে সন্ধান করিয়া লইবেন, এই প্রত্যাশায় কিয়ৎক্ষণ তথায় বসিয়া প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন ; কিন্তু নৌকা আসিল না ; নৌকারোহীও কেহ দেখ। দিল না। নবকুমার ক্ষুধায় অত্যন্ত পীড়িত হইলেন । আর প্রতীক্ষা করিতে না পারিয়া, নৌকার সন্ধানে নদীর তীরে তীরে ফিরিতে লাগিলেন । কোথাও নৌকার সন্ধান পাইলেন না, প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া পূৰ্ব্বস্থানে আসিলেন । তখন পর্যস্ত নৌকা না দেখিয়৷ বিবেচনা করিলেন, জোয়ারের বেগে নৌকা ভাসাইয়ু৷ লষ্টয়া গিয়াছে । এখন প্রতিকুল-স্রোতে প্রত্যাগমH করিতে সঙ্গীদিগের কাজে কাজেই বিলম্ব হইতেছে। কিন্তু জোয়ারও শেষ হইল । তখন ভাবিলেন, প্রতিকুল স্রোতের বেগাধিক বশতঃ জোয়ারে নৌক৷ ফিরিয়া আসিতে পারে নাই ; এক্ষণে ভাটায় অ#ষ্ঠ ফিরিয়া আসিতেছে । কিন্তু ভাটাও ক্রমে অধিক হইল --ত্রমে ক্রমে বেলাবসান হইয়। আসিল ; স্বৰ্য্যাস্ত হইল । যদি নৌক ফিরিয়া আসিবার হষ্টত, তবে এতক্ষণ ফিরিয়া আসিত | তখন নবকুমারের প্রতীতি হইল যে, হয় জলেছুসিসস্থত তরঙ্গে নৌকা জলমগ্ন হইয়াছে, নচেৎ সঙ্গিগণ তাহাকে এই বিজনে পরিত্যাগ করিয়। গিয়াছে । পৰ্ব্বত লচারী ব্যক্তির উপর শিখরখণ্ড ভাঙ্গিয়৷ পড়িলে তাহাকে যেমন একেবারে নিষ্পেষিত করে, এ সিদ্ধাস্ত জন্মমাত্র নবকুমারের হৃদয় সেইরূপ একেবারে নিম্পেষিত হইল । এ সময়ে নবকুমারের মনের অবস্থা যেরূপ হইল, তাহার বর্ণনা অসাধ্য। সঙ্গিগণ প্রাণে নষ্ট হইয়া থাকিবে, এরূপ সন্দেহে পরিতাপযুক্ত হইলেন বটে, কিন্তু আপনার বিপন্ন অবস্থার সমালোচনায় সে শোক শীঘ্র বিস্তৃত হইলেন । বিশেষ যখন মনে হইতে লাগিল যে, হয় ত সঙ্গীর তাহাকে ত্যাগ করিয়াগিয়াছে, তখন ক্রোধের বেগে শোক দূর হইতে লাগিল । নবকুমার দেখিলেন যে, গ্রাম নাই, আশ্রয় নাই, লোক নাই, আহার্য্য নাই, পেয় নাই। নদীর জল অসহ্য লবণাত্মক ; অথচ ক্ষুধাতৃষ্ণায় তাহার হৃদয়