পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণ্ডল৷ করিয়া দাড়াইতেন, তখন সহজেই বোধ হইত, ইনি রমণীকুলরাজ্ঞী । সুন্দরীর বয়ঃক্রম সপ্তবিংশতি বৎসর—ভাদ্রমাসের ভরা নদী । ভাদ্রমাসের নদীজলের স্তায় ইহার রূপরাশি টলটল করিতেছিল—উছলিয়া পড়িতেছিল । বর্ণাপেক্ষা, নয়নাপেক্ষা, সৰ্ব্বাপেক্ষ সেই সৌন্দর্য্যের পরিপ্লব মুগ্ধকর। পূর্ণযৌবনভরে সর্বশরীর সতত ঈষচ্চঞ্চল ; বিনা বায়ুতে নব শরতের নদী যেমন ঈষচ্চঞ্চল, তেমনি চঞ্চল ; সে চাঞ্চল্য মুহুমুহুঃ নুতন নুতন শোভাবিকাশের কারণ। নবকুমার নিমেষশূন্তচক্ষে সেই নুতন নুতন শোভা দেখিতেছিলেন । সুন্দরী নবকুমারের চক্ষু নিমেষশৃষ্ঠ দেখিয়৷ কহিলেন, “আপনি কি দেখিতেছেন ? আমার রূপ ?” নবকুমার ভদ্রলোক ; অপ্রতিভ হইয়। মুখাবনত করিলেন। নবকুমারকে নিরুত্তর দেখিয়া অপরিচিত। পুনরপি হাসিয়া কহিলেন, “আপনি কখন কি স্ত্রীলোক দেখেন নাই, না আপনি আমাকে বড় সুন্দরী মনে করিতেছেন ?” সহজে এ কথা কহিলে তিরস্কারস্বরূপ বোধ হইত, কিন্তু রমণী যে হাসির সহিত বলিলেন, তাহাতে বঙ্গ ব্যতীত অীর কিছুই বোধ হইল না । নবকুমার দেখিলেন, এ অতি মুখর ; মুখরার কথায় কেন ন৷ উত্তর করিবেন ? কহিলেন, “আমি স্ত্রীলোক দেখিয়াছি, কিন্তু এরূপ সুন্দরী দেখি নাই।" রমণী সগৰ্ব্বে জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটিও ন ?” নবকুমারের হৃদয়ে কপালকুণ্ডলার রূপ জাগিতে ছিল ; তিনিও সগৰ্ব্বে উত্তর করিলেন, “একটিও না, এমন বলিতে পারি না ." প্রস্তরে লৌহের আঘাত পড়িল । উত্তরকারিণী কহিলেন, “তবুও ভাল। সেটি কি আপনার গৃহিণী ?” নব। কেন ? গৃহিণী কেন মনে ভাবিতেছ ? স্ত্রী । বাঙ্গালীর। আপন গৃহিণীকে সৰ্ব্বাপেক্ষ সুন্দরী দেখে । নব । আমি বাঙ্গালী ; আপনিও ত বাঙ্গালীর ন্তায় কথা কহিতেছেন । আপনি তবে কোন দেশীয় ? যুবতী আপন পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “অভাগিনী বাঙ্গালী নহে ; পশ্চিমপ্রদেশীয়া মুসলমানী ” নবকুমার পর্য্যবেক্ষণ করিয়া দেখিলেন, পরিচ্ছদ পশ্চিমপ্রদেশীয় মুসলমানীর স্তায় বটে, কিন্তু বাঙ্গালা ত ঠিক বাঙ্গালীর মতই বলিতেছে । ক্ষণপরে তরুণী বলিতে লাগিলেন ,“মহাশয়। বাগ বৈদগ্ধ্যে আমার পরিচয় লইলেন ;– আপন পরিচয় দিয়া চরিতার্থ % ஒ; Sసి করুন। যে গৃহে সেই অদ্বিতীয় রূপসী গৃহিণী, সে श्रृश् কোথায় ?” নবকুমাৰ কহিলেন, “আমার নিবাস সপ্তগ্রাম " বিদেশিনী কোন উত্তর করিলেন না । সহসা তিনি মুখবনত করিয়া, প্রদীপ উজ্জ্বল করিতে লাগিলেন । ক্ষণেক পরে মুখ ন তুলিয়া বলিলেন,"দাসীর নাম মতি । মহাশয়ের নাম কি শুনিতে পাই ন ?" নবকুমার বলিলেন, “নবকুমার শম্ম। " প্রদীপ নিবিয়া গেল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ সুন্দরী-সন্দর্শনে “——ধর দেবি মোহন মুরতি দেহ আজ্ঞা, সাজাই ও বরবপু আনি নানা অভিরণ " —মেঘনাদবধ | ২ নবকুমার গৃহস্বামিনীকে ৬াকিয়া অন্য প্রদীপ আনিতে বলিলেন । অঙ্গ প্রদীপ আনিবার পূৰ্ব্বে একটি দীর্ঘনিশ্বাসশব্দ শুনিতে পাইলেন । প্রদীপ অনিবার ক্ষণেক পরে ভূত্যবেশী একজন মুসলমান আসিয়া উপস্থিত হইল। বিদেশিনী তাহাকে দেখিয়া কহিলেন, “সে কি, তোমাদিগের এত বিলম্ব হুইল কেন ? আর সকলে কোথায় ?” ভূত কহিল, “বাহকের সকল মাতোয়ার হইয়া" ছিল । তাহীদের গুছাইয়া আনিতে আমরা পান্ধীর পশ্চাতে পড়িয়াছিলাম । পরে ভগ্নশিবিকা দেখিয়া এবং আপনাকে না দেখিয়া আমরা একেবারে অজ্ঞান হইয়াছিলাম। কেহ কেহ সেই স্থানে আছে ; কেন্থ কেহ অন্যান্য দিকে আপনার সন্ধানে গিয়াছে । আমি এ দিকে সন্ধানে আসিয়াছি ” মতি কহিলেন, “তাহাদিগকে লইয়া আইস ।” নফর সেলাম করিয়া চলিয়া গেল, বিদেশিনী কিয়ৎকাল করলগ্নকপোলা হইয়া বসিয়া রহিলেন । নবকুমার বিদায় চাহিলেন । তখন মতি স্বপ্নোখিতার স্তায় গাত্ৰোখান করিয়া, পূৰ্ব্ববৎ ভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কোথায় অবস্থিতি করিবেন ?” নব। ইহারই পরের ঘরে । মতি । আপনার সে ঘরের কাছে একখানি পান্ধী দেখিলাম, আপনার কি কেহ সঙ্গী আছেন ? “আমার স্ত্রী সঙ্গে ”