পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ջօ মতিবিবি আবার ব্যঙ্গের অবকাশ পাইলেন । কহিলেন, “তিনিই কি অদ্বিতীয় রূপসী ?” নব । দেখিলে বুঝিতে পারিবেন। মতি । দেখা কি পাওয়া যায় ? নব । ( চিন্তা করিয়া ) ক্ষতি কি ? মতি । তবে একটু অনুগ্রহ করুন। অদ্বিতীয় রূপসীকে দেখিতে বড় কৌতুহল হইতেছে । আগর গিয়া বলিতে চাহি ; কিন্তু এখনই নহে—আপনি এখন যান । ক্ষণেক পরে আমি আপনাকে সংবাদ করিব । নবকুমার চলিয়া গেলেন । ক্ষণেক পরে অনেক লোকজন, দাস-দাসী ও বাহক সিন্দুকাদি লইয়। উপস্থিত হইল ! একখানি শিবিকাও আসিল ; তাহাতে এক জন দাসী । পরে নবকুমারের নিকট ংবাদ আসিল, “বিবি স্মরণ করিয়াছেন " নবকুমার মতিবিবির নিকট পুনরাগমন করিলেন । দেখিলেন, এবার আবার রূপান্তর । মতিবিবি পূৰ্ব্ব পরিচ্ছদ ত্যাগ করিয়া সুবর্ণমুক্তাদিশোভিত কারুকার্য্যযুক্ত বেশভূষা ধারণ করিয়াছেন ; নিরলঙ্কার দেহ অলঙ্কারে খচিত করিয়াছেন । যেখানে যাহা ধরে— কুস্তলে, কবরীতে, কপালে, নয়নপাশ্বে, কর্ণে, কণ্ঠে, হৃদয়ে, বাহুযুগে সৰ্ব্বত্র সুবর্ণমধ্য হইতে হীরকাদি রত্ন ঝলসিতেছে । নবকুমারের চক্ষু অস্থির হইল । অধিকাংশ স্ত্রীলোক বহু স্বর্ণখচিত হইলে প্রায় কিছু শ্ৰীহীন হয়,— অনেকেই সজ্জিত পুত্তলিকার দশ প্রাপ্ত হয়েন ; – কিন্তু মতিবিবিতে সে শ্ৰীহীনতা বা দশ দৃষ্ট হুইবার সম্ভাবনা ছিল না । প্রভূতনক্ষত্রমালভূষিত আকাশের ন্যায়—মধুরায়ত শরীরসহিত অলঙ্কারবাহুল্য সুসঙ্গত বোধ হইল, বরং তাহাতে আরও সৌন্দর্য। প্রভা বদ্ধি 5 হইল। মতিবিবি নবকুমারকে কহিলেন, “মহাশয়, চলুন, আপনার পল্লীব নিকট পরিচিত হইয়। আসি ।" নবকুমার বলিলেন, “সে জন্য অলঙ্কার পধিবার প্রয়ো জন ছিল না । আমার পরিবারের কোন গহনাই নাই ।” মতিবিবি । গহনাগুলি ন হয় দেখাইবার জন্য পরিয়াছি । স্ত্রীলোকের গহন থাকিলে সে না দেখা ইলে বাচে না । এখন চলুন । নবকুমার মতিবিবিকে সঙ্গে করিয়া লইয়া চলিলেন। যে দাসী শিবিকারোহণে আসিয়াছিল, সেও সঙ্গে চলিল । ইহার নাম পেয মন । কপালকুণ্ডলা দোকানঘরের আর্দ্র মৃত্তিকায় এককিনী বসিয়াছিলেন । একটি ক্ষীণালোক প্রদীপ জলিতেছে মাত্র-আবদ্ধ নিবিড় কেশরাশি পশ্চাদ্ভাগ অন্ধকার করিয়া রছিয়াছিল । মতিবিবি প্রথম যখন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী র্তাহাকে দেখিলেন, তখন অধরপাশ্বে ও নমনপ্রান্তে ঈষৎ হাসি ব্যক্ত হইল। ভাল করিয়া দেখিবার জন্ত প্রদীপটি তুলিয়া কপালকুণ্ডলার মুখের নিকট আনিলেন। তখন সে হাসিহাসি ভাব দূর হইল ; মতির মুখ গম্ভীর হইল ;–অনিমেষলোচনে দেখিতে লাগিলেন । কেহ কোন কথা কহেন না ;–মতি মুগ্ধ ; কপালকুণ্ডলা কিছু বিস্মিতা । ক্ষণেক পরে মতি আপন অঙ্গ হইতে অলঙ্কাররাশি মোচন করিতে লাগিলেন। মতি আত্মশরীর হইতে অলঙ্কাররাশি মুক্ত করিয়া একে একে কপাল কুণ্ডলীকে পরাইতে লাগিলেন । কপালকুণ্ডলা কিছু বলিলেন না। নবকুমার কহিতে লাগিলেন, “ও কি হইতেছে ?” মতি তাহার কোন উত্তর করিলেন না । অলঙ্কার সমাবেশ সমাপ্ত হইলে, মতি নবকুমারকে কহিলেন, “আপনি সভাই বলিয়াছিলেন । এ ফুল রাজ্যেষ্ঠানেও ফুটে না । পরিতাপ এই যে, রাজধানীতে এ রূপবশি দেখাইতে পারিলাম না ; এ সকল অলঙ্কার এই অঙ্গেরই উপযুক্ত—এই জন্য পরাইলাম । আপনিও কখন কখন পরাইয়। মুখর বিদেশিনীকে মনে করিবেন ।” নবকুমাব চমৎক্ল ত হইয়। কহিলেন, “সে কি ! এ যে বহুমূল্য অলঙ্কার, আমি এ সব লইব কেন ?" মতি কহিলেন, “ঈশ্বরপ্রসাদাৎ আমার আরও আছে । আমি নিরাভরণ হইব না । ইহাকে পরাইয়! আমার যদি সুখবোধ হয়, আপনি কেন ব্যাঘাত করেন ?" -- মতিবিবি ইহা কহিয়। দাসীসঙ্গে চলিয়া গেলেন । বিরলে তাসিলে পেয মন মতিবিবিকে জিজ্ঞাসা করিল, “বিবি, এ ব্যক্তি কে ?” যবনবাল উত্তর করিলেন, “মের খসম্!" চতুর্থ পরিচ্ছেদ শিবিকারোহণে “—খুলিন্ত সত্বরে, কঙ্কণ, বলয়, হার, সাঁথি, কণ্ঠমালা, কুণ্ডল, নুপুর, কাঞ্চী ।” —মেঘনাদবধ । গহনার দশা কি হইল, বলি শুন । মতিবিবি গহন রাখিবার জন্য একটি রৌপ্যজড়িত হস্তিদন্তের কোঁটা পাঠাইয়া দিলেন । দস্থ্যরা তাহার অল্প