পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণ্ডল৷ লু। ত হইয়াছে। কেবল রাজাজ্ঞার অপেক্ষ । রাজার সম্মতি প্রকাশ না হইলে কোন সম্বন্ধ স্থির নহে । বাদ । আমার সন্মতির প্রয়োজন কি ? কাহাকে এ সুখের সাগরে ভাসাইবে অভিপ্রায় করিয়াছ ? লু। দাসী দিল্লীশ্বরের সেবা করিয়াছে বলিয়। দ্বিচারিণী নহে । দাসী আপিন স্বামীকেই বিবাহ করি বার অনুমতি চাহিতেছে । বাদ । বটে ! এ পুরাতন নফরের দশ৷ কি করিবে ? লু। দিল্লীশ্বরী মেহের-উন্নিসাকে দিয়৷ যাইব । বাদ । দিল্লীশ্বরী মেহের-উল্লিস কে ? লু। যিনি হইবেন । জাৰ্ভাগীর মনে ভাবিলেন যে, মেহের-উল্লিসা যে দিল্লীশ্বরী হইবেন, তাহা লুৎফউন্নিস ধ্রুব জানিয়৷ ছেন । তৎকারণে নিজ মনোভিলাষ বিফল হইল বলিয়। রাজবিরোপ হইতে বিরাগে অবসর লইতে চাহিতেছেন । এইরূপ বুঝিয়া জাহাণীর গুঃখিত হইয়। নীরবে রহিলেন । লুৎফউল্লিস কহিলেন, “মহারাজের কি এ সম্বন্ধে সম্মতি নাই ?” বাদ । আt ... অসম্মতি নাই । কিন্তু স্বামীর সহিত আবার বিবাহের আবশ্যকতা কি ? লু। কপালক্রমে প্রথম বিবাহে স্বামী পত্নী বলিয়া গ্ৰহণ করিলেন ন। এক্ষণে জার্হাপনার দাসীকে ত্যাগ করিতে পারিবেন না । বাদশাহ রহস্তে স্থাস্ত করিয়৷ পরে হইলেন । কহিলেন, “প্রেয়সি! তোমাকে আমার আদেয় কিছুই নাই । তোমার যদি সেই প্রবৃত্তি হয়, তবে তদুপই কর । কিন্তু আমাকে কেন ত্যাগ করিয়৷ যাইবে ? এক আকাশে কি চন্দ্র সুর্য্য উভয়েই বিরাজ করেন না ? এক বৃন্তে কি দুটি ফুল ফুটে না ?” লুৎফ উন্নিসা বিস্ফারিতচক্ষে বাদশাহের প্রতি দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “ক্ষুদ্র ফুল ফুটিয়া থাকে ; কিন্তু এক মৃণালে দুইটি কমল ফুটে না। আপনার রত্নসিংহাসনতলে কেন কণ্টক হইয়। থাকিব ?” • লুৎফউন্নিসা আত্মমন্দিরে প্রস্থান করিলেন। র্তাহার এরূপ মনোবাঞ্ছা ষে কেন জন্মিল, তাহা তিনি জাহাগীরের নিকট ব্যক্ত করেন নাই। অনুভবে যেরূপ বুঝা যাইতে পারে, জাহাগীর সেইরূপ বুঝিয়া ক্ষান্ত হইলেন। নিগৃঢ় তত্ত্ব কিছুই জানিলেন না। লুৎফউন্নিসার হৃদয় পাষাণ । সেলিমের রমণীহৃদয়জিৎ গম্ভীর ల్సి রাজকান্তিও কখন তাহার মনোমুগ্ধ করে নাই। কিন্তু এইবার পাষাণমধ্যে কীট-প্রবেশ করিয়াছিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ অlষ্মমন্দিরে “জনম অবধি হম রূপ নেহারন্থ নয়ন ন৷ তিরপিত ভেল । সোই মধুর বেল শ্রবণহি শুনন্ত শ্রতিপথে পরশ না গেল ॥ কত মধু্যামিনী রভসে গোয়াইনু না বুঝনু কৈছন না। কেল। লাখ লাখ যুগ ভিয়ে হিয়ে রাখিন্তু তবু হিয়৷ জুড়ান না গেল'। যত যত রসিক জন রসে অনুগমন অনুভব ( 1 বিদ্যাপতি কহে প্রাণ জুড়াইতে লাখে ন৷ মিলল এক ॥” লুৎফউল্লিস আলয়ে আসিয়া প্রফুল্লবদনে পেষ মনকে ডাকিয় বেশভূষা পরিত্যাগ করিলেন । স্ববর্ণ-মুক্তাদিখচিত বসন পরিত্যাগ করিয়৷ পেস মনুকে কহিলেন যে, “এই পোষাকটি তুমি লও " শুনিয়। পেয মন কিছু বিস্ময়াপন্ন হইল । পোষাকটি বহুমূল্যে সম্প্রতিমার প্রস্তুত হইয়াছিল। কহিল, -“পোষাক আমার কেন ? আজিকার কি ংবাদ ?” লুৎফউল্লিস কহিলেন, “শুভ সংবাদ বটে ।” পে । তা ত বুঝিতে পারিতেছি । মেহেরউল্লিসার ভয় কি ঘুচিয়াছে ? লু। ঘুচিয়াছে । এক্ষণে সে বিষয়ে কোন চিত্ত৷ নাই । - পেয মন অত্যন্ত আহলাদ প্রকাশ কহিল, “তবে এক্ষণে বেগমের দাসী হইলাম।” লু। যদি তুমি বেগমের দাসী হইতে চাও, তবে আমি মেহেরউন্নিসাকে বলিয়া দিব । পে । সে কি ? আপনি কহিতেছেন যে মেহেরউল্লিসার বাদশাহের বেগম হইবার কোন সম্ভাবনা নাই । লু। আমি এমন কথা বলি নাই। আমি বলিয়াছি, সে বিষয়ে আমার কোন চিন্তা নাই । করিয়া