Зso
দুরে নীল পৰ্ব্বতশ্রেণী দেখা যাইতেছিল । দুই জনে অনেকক্ষণ মুগ্ধ হইয়। নীরবে রছিলেন । অনেকক্ষণ পরে কল্যাণী পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ভাবিতেছ ?”
মহেন্দ্র । কি করিব, তাহাই ভাবি – স্বপ্ন কেবল বিভীষিকামাত্র, আপনার মনে জন্মিয় আপনি লয় পায়, জীবনের জলবিম্ব—চল, গৃহে যাই ।
ক । “যেখানে দেব তা তোমাকে যাইতে বলেন, তুমি সেইখানে যাও”–এই বলিরা কল্যাণী কন্যাকে স্বামীর কোলে দিলেন ।
মহেন্দ্র ক্যাকে কোলে লক্টর জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর তুমি—তুমি কোথা যাইবে ?”
কল্যাণী দুই হাতে দুষ্ট চোখ ঢাকিয়া মাথ। টিপিয়! ধরিয়া বলিলেন, “আমাকেও দেবতা যেখানে যাইতে বলিয়াছেন, আমিও সেইখানে যাইব ।”
মহেন্দ্র চমকিয়া উঠিলেন ; বলিলেন, “স কোথা, কি প্রকারে যাইবে ?"
কল্যাণী বিষের কোঁটা দেখাইলেন । মহেন্দ্র বিস্মিত হষ্টয় বলিলেন “সে কি ? বিষ খাইবে ?”
ক । “খাষ্টৰ মনে করিয়াছিলাম, কিন্তু—“ কল্যাণী নীরব হইয়। ভাবিতে লাগিলেন । মহেন্দ্র র্তাহার মুখ চাহিয়া রছিলেন। প্রতি পলকে বৎসর বোধ হইতে লাগিল । কল্যাণী আর কথা শেষ করিলেন না দেখিয়া মহেন্দ্র জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিন্তু —বলিয়। কি বলিছেছিলে ?"
ক । খাইব মনে করিয়ছিলাম—কিন্তু তোমাকে রাখিয়া—সুকুমারীকে রাখিয়া বৈকুণ্ঠও আমার যাইতে ইচ্ছা করে না । আমি মরিব না ।
এই বলিদ। কল্যাণী বিমের কোঁটটি মাটীতে রাখিলেন । তখন দুষ্ট জনে ভূত ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে কথোপকথন করিতে লাগিলেন । কথায় কথায় উভয়েই অন্যমনস্ক হইলেন । এই অবকাশে মেয়েটি খেলা করিতে করিতে বিষের কোঁটা তুলির লইল । কেহুই তাহ দেখিলেন ন! ।
সুকুমারী মনে করিল, এটি বেশ খেলিবার জিনিষ । কোঁটাটি একবার বা হাতে ধরিয়া ডাইন হাতে বেশ করিয়া তাহাকে চাপড়াইল, তার পর ডাইন হাতে , ধরিয়া বঁ। হাতে তাহাকে চাপড়াইল । তার পর দুষ্ট হাতে ধরিয়া টানাটানি করিল । সুতরাং কোঁটাটি খুলিয়া গেল—বড়াটি পড়িয়া গেল ।
বাপের কাপড়ের উপর ছোট গুলীটি পড়িয়া গেল—সুকুমারী তাহ দেখিল, মনে করিল, এ আর
বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী
একটা খেলিবার জিনিস। কোঁটা ফেলিয়া দিয়া থাবা
মারিয়া বড়টি তুলিয়। লইল ।
কোঁটাটি সুকুমারী কেন গালে দেয় নাই, বলিতে
পারি না-কিন্তু বড়টি সম্বন্ধে কাল বিলম্ব হইল না।
প্রাপ্তিমাত্রেণ ভোক্তব্যং—সুকুমারী বড়টি মুখে পূরিল।
“কি খাইল ! কি খাইল ! সৰ্ব্বনাশ !"
কল্যাণী ইহা বলির কন্যার মুখের ভিতর আঙ্গুল পূরিলেন । তখন উভয়েই দেখিলেন যে, বিষের কেট খালি পড়িয়া রহিয়াছে । সুকুমারী তখন একট। খেল পাইয়াছি মনে করিয়৷ দীত চাপিয়া— সবে গুটিকতক দাত উঠিয়াছে—মা’র মুখপানে চাহিয়া হাসিতে লাগিল । ইতিমধ্যে বোধ হয়, বিযবড়ীর স্বাস মুখে কদৰ্য্য লগিয়াছিল, কেন না, কিছু পরে মেয়ে আপনি দাত চড়িয়া দিল, কল্যাণী বSী বাহির করিয়! ফেলিয়। দিলন । মেয়ে কাদিতে লাগিল ।
বটিক। মাটান্তে পড়িয়া রহিল। কল্যাণী নদী হইতে আঁচল ভিজাইর জল আনিয়। মেয়ের মুখে দিলেন । অতি সকাতরে মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “একটু কি পেটে গেছে ?"
মণ টাই আগে বাপ-মা'র মনে আসে—যেখানে অপিক ভালবাসা, সেখানে ভয়ই তাপিক প্রবল ৷ মহেন্দ্র কখন দেখেন নাই যে, বড়টি। আগে কত বড় ছিল। এখন বড়ট হাতে লইয়। অনেকক্ষণ ধরিয়া নিরীক্ষণ করিমু! বলিল্লেল “বোধ হয়, তানেকট খাষ্টয়াছে ।"
কলা:ণীর ও কাজেই সেই বিশ্বাস হইল । অনেকক্ষণ ধরিয়া তিনি ও বড় হাতে লইয়। নিরীক্ষণ করিলেন ; এ দিকে মেয়ে যে দুই এক টোক গিলিয়ছিল, তাহার গুণে কিছু বিরূতাবস্থ প্রাপ্ত হইল । কিছু ছট্ফট্ করিতে লাগিল-কাদিতে লাগিল শেব কিছু অবসন্ন হষ্টয় পড়িল । তখন কল্যাণী স্বামীকে বলি:লন, “আর দেখ কি ? যে পথে দেবতারা ডাকিয়াছে, সেই পথে সুকুমারী চলিল—
অামাকেও সাইতে হইবে।”
এই বলিয়া কল্যাণী বিষের বড় মুখে ফেলিয়া দিয়া মুহূৰ্বমধ্যে গিলিয়। ফেলিলেন । - মহেন্দ্র রোদণ করিয়! বলিলেন, “কি করিলে কল্যাণি, ও কি করিলে ?” -
কল্যাণী কিছু উত্তর না করিয়া স্বামীর পদধূলি মস্তকে গ্রহণ করিলেন ; বলিলেন, “প্ৰভু ! কথা কহিলে কখ। বাড়িবে। আমি চলিলাম।”
“কল্যাণী, কি করিলে বলিয়া মহেন্দ্র চীৎকার করিয়া কঁাদিতে লাগিলেন । অতি মৃদুস্বরে কল্যাণী
পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২২
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
