পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

جيني দেবী এক ঘুষি তুলিল। রঙ্গরাজ ঘুটি হাতে ধরিয়া ফেলিল । বজরার এক দিকে অনেক অস্ত্র ঝুলন ছিল। এই সময়ে ব্রজেশ্বর ক্ষিপ্ৰহস্তে তাহার মধ্য হইতে একখানি তীক্ষুধার তরবারি লইয়া, হাসিয়া বলিল, "দেখ ঠাকুর, ব্ৰহ্মহত্যায় আমার ভয় নাই।” এই বলিয়া রঙ্গরাজকে কাটিতে ব্ৰজেশ্বর তরবারি উঠাইল । সেই সময়ে আর চারি পাঁচ জন দস্য মুক্তদ্বারে কামরার ভিতর প্রবেশ করিয়া, তাহার উপর পড়িল । উখিত তরবারি হাত হইতে কাড়িয়া লইল । দুই জন দুই হাত চাপিয়া ধরিল--এক জন দড়ি লইয়া ব্ৰজেশ্বরকে বলিল, “বাধিতে হইবে কি ?” তখন ব্রজেশ্বর বলিল, “র্বাধিও না । আমি পরাজয় স্বীকার করিলাম, কি চাও বল—আমি দিতেছি ।” রঙ্গরাজ বলিল, আপনার ষাহ কিছু আছে, সব লইয়। যাইব । কিছু ছাড়িয়া দিতে পারিতাম — কিন্তু যে কিল তুলিয়াছিলেন--আমায় মাথায় লাগিলে মাথা ভাঙ্গিয়া যাইত-—এক পয়সাও ছাড়িব না ।” ব্ৰজেশ্বর বলিল, “যাহা বজরায় আছে—সব লইয়া যাও, এখন আর আপত্তি করিব না ।” ব্ৰজেশ্বর এ কথা বলিবার পূৰ্ব্বেই দস্থ্যরা জিনিস পত্র বজরা হইতে ছিপে তুলিতে আরম্ভ করিয়াছিল । এখন প্রায় পচিশ জন লোক বজরায় উঠিয়াছিল। জিনিসপত্র বজরায় বিশেষ কিছু ছিল না, কেবল পরিধেয় বস্ত্রাদি, পূজার সামগ্রী, এইরূপ মাত্র । মুহূৰ্ত্তমধ্যে তাহার। সেই সকল দ্রব্যাদি ছিপে তুলিয়া ফেলিল। তখন আরোহী, রঙ্গরাজকে বলিল, “সব জিনিস লইয়াছ, আর কেন দিক্‌ কর—এখন স্বস্থানে যাও ” রঙ্গরাজ উত্তর করিল, “ষাইতেছি । কিন্তু আপনাকেও আমাদের সঙ্গে যাইতে হইবে।” ত্র । সে কি ? আমি কোথায় যাইব ? রঙ্গ। আমাদের রাণীর কাছে। ব্র । তোমাদের আবার রাণী কে ? রঙ্গ । আমাদের রাজরাণী । ব্র । তিনি আবার কে ? ডাকাইতের রাজরাণী ত কখন শুনি নাই । রঙ্গ। দেবী রাণীর নাম কখন শুনেন নাই ? ব্র । ওহে ! তোমরা দেবী চৌধুরাণীর দল ? রঙ্গ । দলাদলি আবার কি ? আমরা রাণীঞ্জীর কারপরদাজ । ব্র ; যেমন রাণী, তেমন কারপরদাজ ! তা, আমাকে রাণী দর্শনে যাইতে হইবে কেন ? আমাকে কয়েদ রাখিয়া কিছু আদায় করিবে, এই অভিপ্রায় ? চৌধুরাণী ૭૬ রঙ্গ । কাজেই। বজরায় ত কিছু পাইলাম না । , আপনাকে আটক করিলে যদি কিছু জিনিস পাওয়৷ যায় । - ব্র । আমারও যাইবার ইচ্ছা হইতেছে—তোমা" দের রাজরাণী একটা দেখিবার জিনিষ শুনিয়াছি। তিনি না কি যুবতী ? রঙ্গরাজ । তিনি আমাদের মা—সস্তানে মা’র বয়সের হিসাব রাখে না । ব্র । শুনিয়াছি, বড় রূপবতী । রঙ্গ। আমাদের মা ভগবতীর তুল্য। ব্র । চল, তবে ভগবতী দর্শনে যাই । এই বলিয়৷ ব্ৰজেশ্বর রঙ্গরাজের সঙ্গে কামরার বাহিরে আসিলেন । দেখিলেন যে, বজরার মাঝিমাল্লা সকলে ভয়ে জলে পড়িয়া কাছি ধরিয়া ভাসিয়া আছে । ব্ৰজেশ্বর তাহাদিগকে বলিলেন, “এখন তোমরা বজরায় উঠিতে পার-ভয় নাই। উঠিয়া আল্লার নাম নাও ! তোমাদের জান, মান, দৌলত ও ইজ্জত সব বজায় আছে ! তোমরা বড় হুসিয়ার ” মাঝিরা তখন একে একে বজরায় উঠিতে লাগিল ! বজেশ্বর রঙ্গরাঞ্জকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখন আমার দ্বারবানদের বাধন খুলিয়া দিতে পারি কি ?” রঙ্গরাজ বলিলেন, “আপত্তি নাই। উহার ষদি হাত খোলা পাইয়া আমাদের উপর আক্রমণ করে, তখন আমরা আপনার মাথা কাটিয়া ফেলিব। ইহা উহাদের বুঝাইয়। দিন ।” বজেশ্বর দ্বারবানদিগকে সেইরূপ বুঝাইয়া দিলেন। আর ভরসা দিলেন যে, তাহারা ষেরূপ বীরত্ব প্রকাশ করিয়াছে, তাহাতে শীঘ্রই তাহাদের ডালরুটীর বরাদ বাড়িবে। তখন ব্রজেশ্বর ভৃত্যবর্গকে আদেশ করিলেন ষে, “তোমরা নিঃশঙ্কচিত্তে এইখানে বজরা লইয়৷ থাক । কোথাও যাইও না বা কিছু করিও না। আমি শীঘ্র ফিরিয়া আসিতেছি ।" এই বলিয়। তিনি রঙ্গরাজের সঙ্গে ছিপে উঠিলেন । ছিপের নাবিকেরা “দেবী রাণীকি জয়” স্থাকিল—ছিপ বাহিয়৷ চলিল । পঞ্চম পরিচ্ছেদ ব্ৰজেশ্বর যাইতে যাইতে রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা করিল, “আমাকে কত দূর লইয়া যাইবে-তোমার রাণীজি কোথায় থাকেন ?" র। ঐ বজরা দেখিতেছেন না ? ঐ বজরা তার।