পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(tぐり যে গুঢ় মন্ত্রণা, আর কাহারও জানিবার সম্ভাবনা" নাই । বিশেষ দেবী এ ঘাটে আসিবার আগেই কোম্পানীর সিপাহী রঙ্গপুর হইতে যাত্রা করিয়াছিল, সন্দেহ নাই ; নহিলে ইহারই মধ্যে পৌছিত না ; আর ইতিপূৰ্ব্বেই হরবল্লভ কোথায় যাইতেছেন, কাহারও কাছে প্রকাশ না করিয়া দুরযাত্রা করিয়াছেন, আজও ফেরেন নাই। কথাটা বুঝিতে দেরী হইল না । তাই হরবল্লভ টাকা পরিশোধের কোন উদ্যোগ করেন নাই । তথাপি ব্ৰজেশ্বর ভুলিলেন না যে,— “পিতা স্বৰ্গঃ পিতা ধৰ্ম্মঃ পিতা হি পরমং তপঃ । পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সৰ্ব্বদেবতাঃ ॥” ব্ৰজেশ্বর প্রফুল্লকে বলিলেন, “আমি মরি, কোন ক্ষতি নাই। তুমি মরিলে আমার মরার অধিক হইবে, কিন্তু আমি দেখিতে আসিব না । তোমার আত্মরক্ষার আগে, আমার ছার প্রাণ রাখিবার আগে, আমার পিতাকে রক্ষা করিতে হুইবে ।” প্র । সে জন্য চিন্তা নাই । আমার রক্ষা হইৰে ন ; অতএব তার কোন ভয় নাই । তিনি তোমায় রক্ষা করিলে করিতে পারিবেন, তবে ইহাও তোমার মনস্তুষ্টির জন্য আমি স্বীকার করিতেছি যে, তার অমঙ্গল সম্ভাবনা থাকিতে আমি আত্মরক্ষার কোন উপায় করিব না। তুমি বলিলেও করিতাম না, না বলিলেও করিতাম না। তুমি নিশ্চিন্ত থাকিও । এই কথা, দেবী অন্তরিক বলিয়াছিল । হরবল্লভ প্রফুল্লের সর্বনাশ করিয়াছিল, হরবল্লভ এখন দেবীর সৰ্ব্বনাশ করিতে নিযুক্ত ; তবু দেবী তার মঙ্গলাকাজিঙ্কণী। কেন না, প্রফুল্ল নিষ্কাম । যার ধৰ্ম্ম নিষ্কাম, সে কার মঙ্গল খুজিলাম, তত্ত্ব রাখে না । মঙ্গল হইলেই হইল । কিন্তু এই সময়ে তীরবর্তী অরণ্যমধ্য হইতে গভীর ভূৰ্য্যধ্বনি হইল। দুই জনেই চমকিয়া উঠিল। চতুর্থ পরিচ্ছেদ দেবী ডাকিল, “নিশি ” নিশি ছাদের উপর আসিল । দেবী । কার ভেরী ঐ ? নিশি । যেন দাড়ী-বাবাজীর বলিয়া বোধ হয় । দেবী । রঙ্গরাজের ? নিশি । সেই রকম । দেবী । সে কি ? আমি রঙ্গরাজেকে প্রাতে দেবীগড় পাঠাইয়াছি । 姆 নিশি। বোধ হয়, পথ হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে । দেবী । রঙ্গরাজকে ডাক । ব্ৰজেশ্বর বলিল, “ভেরীর আওয়াজ অনেক দুর হইতে হইয়াছে। এখান হইতে ডাকিলে ডাক শুনিতে পাইবে না। আমি নামিয়া গিয়া ভেরীওয়ালাকে খুজিয়া আনিতেছি।” দেবী বলিল, “কিছু করিতে হইবে না । তুমি একটু নীচে গিয়া নিশির কৌশল দেখ ” নিশি ও ব্রজ নীচে আসিল । নিশি নীচে গিয়া, এক বঁাশী বাহির করিল। নিশি গীতবাদ্যে বড় পটু, সে শিক্ষাটা রাজবাড়ীতে হইয়াছিল। নিশিই দেবীর বীণার ওস্তাদ । নিশি বঁাশীতে ফু দিয়া মল্লারে তান মারিল। অনতিবিলম্বে রঙ্গরাজ বজরায় আসিয়া উঠিয়া, দেবীকে আশীৰ্ব্বাদ করিল। এই সময়ে ব্রজেশ্বর নিশিকে বলিল, “তুমি ছাদে যাও1 তোমার কাছে কেহ বোধ হয়, কথা লুকাইবে না । কি কথা হয়, শুনিয়া আসিয়৷ অামাকে সব বলিও ” নিশি স্বীকৃত হইয়া, কামরার বাহির হইল— বাহির হইয়া আবার ফিরিয়া আসিয়া ব্ৰজেশ্বরকে বলিল, “আপনি একটু বাহিরে আসিয়া দেখুন।” ব্ৰজেশ্বর মুখ বাড়াইয়৷ দেখিল । দেখিতে পাইল, জঙ্গলের ভিতর হইতে অগণিত মকুন্য বাহির হইতেছে । নিশিকে জিজ্ঞাসা করিল, “উহার কারা ? সিপাই ?” নিশি বলিল, “বোধ হয়, উহার বরকন্যাজ । রঙ্গরাজ আনিয়! থাকিবে ।” - দেবীও সেই মনুষ্যশ্রেণী দেখিতেছিল, এমত সময়ে রঙ্গরাজ আসিয়া আশীৰ্ব্বাদ করিল । দেবী জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি এখানে কেন রঙ্গরাজ ?” রঙ্গরাজ প্রথমে কোন উত্তর করিল না । দেবী পুনরপি বলিল, “আমি সকালে তোমাকে দেবীগড় পাঠাইয়াছিলাম। সেখানে ধাও নাই কেন ? আমার ' কথা অমান্ত করিয়াছ কেন ?" আমি দেবীগড় যাইতেছিলাম—পথে রঙ্গ । ঠাকুরজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল । ● দেবী। ভবানী ঠাকুর ? রঙ্গ । তার কাছে শুনিলাম, কোম্পানীর সিপাহী আপনাকে ধরিতে আসিয়াছে । তাই আমরা জুই জনে বরকন্দাজ সংগ্ৰহ করিয়া লইয়া আসিয়াছি। বরকলাজ জঙ্গলে লুকাইয়। রাখিয়া আমি. তীরে