পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী কাছে ষোড়হাত করিয়া ভিক্ষা করিতেছি, আমাকে মাফ . করুন । সাহেব ব্রজেশ্বরের পিতৃভক্তি দেখিয়া, প্রসন্ন হুইয়া ব্ৰজেশ্বরকে ক্ষমা করিলেন, আর ব্রজেশ্বরের হাত লইয়া আচ্ছা করিয়া নাড়িয়া দিলেন। ব্রজেশ্বরের চতুর্দশ পুরুষের মধ্যে কখন জানে না, সেকহাগু কাহাকে বলে —সুতরাং ব্রজেশ্বর একটু ভেকা হইয়া রহিল। মনে করিলেন, “कि জানি, যদি আবার বাধে s" এই ভাবিয়া ব্ৰজেশ্বর বাহিরে গিয়া বসিল । কেবল ঝড়, —বৃষ্টি বড় নাই,—ভিজিতে হইল না । রঙ্গরাজও বাহিরে আসিয়া, কামরার দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়া, দ্বারে পিঠ দিয়া বসিল—দুই দিকের পাহারায় । বিশেষ এ সময় বাহিরে একটু সতর্ক থাকা ভাল, বজরা বড় তীব্রবেগে যাইতেছে, হঠাৎ বিপদ ঘটাও বিচিত্র নহে। দিবা উঠিয়া দেবীর কাছে গেল—পুরুষ মহলে এখন আর প্রয়োজন নাই । নিশি উঠিল না—তার কিছু মতলব ছিল । সৰ্ব্বস্ব শ্ৰীকৃষ্ণে অর্পিত—সুতরাং অগাধ সাহস । সাহেব জাকিয়া আবার রূপার চোঁকিতে বসিলেন ; ভাবিতে লাগিলেন, “ডাকাইতের হাত হইতে কিরূপে মুক্ত হইব ? যাহাকে ধরিতে আসিয়াছিলাম, তাহারই কাছে ধরা পড়িলাম—স্ত্রীলোকের কাছে পরাজিত হইলাম, ইংরেজমহলে আর কি বলিয়া মুখ দেখাইব ? আমার না ফিরিয়া যাওয়াই ভাল।” হরবল্লভ আর বসিবার স্থান না পাইয়। নিশিসুন্দরীর মসনদের কাছে বসিলেন । দেখিয়া নিশি বলিল, “আপনি একটু নিদ্রা যাবেন ?” “হর। আজ কি আর নিদ্রা হয় ? নিশি । আজ না হইলে ত আর হইল না । হর । সে কি ? নিশি ! আবার ঘুমাইবার দিন কবে পাইবেন ? श्द्र । ८कन ? নিশি। আপনি দেবী চৌধুরাণীকে ধরাইয় দিতে আসিয়াছিলেন । হয়। তা–তা—কি জান ? নিশি ॥ ধরা পড়িলে দেবীর কি হইত, জান ? হর । অ—এমন—কি— নিশি । এমন কিছু নয়, ফঁাসি । श्ब्र ? डl-नी-**¢ई-डी कि छांनনিশি । দেবী তোমার কোন অনিষ্ট করে নাই, বরং ভারী উপকার করিয়াছিল—ষখন তোমার জাতি যায়, প্রাণ যায়, তখন তোমায় পঞ্চাশ হাজার টাকা eoس-er t)وات নগদ দিয়া তোমায় রক্ষা করিয়াছিল। তার প্রত্যু পকারে তুমি তাহাকে ফালি দিবার চেষ্টায় ছিলে । তোমার যোগ্য কি দণ্ড, বল দেখি ? হরবল্লভ চুপ করিয়া রহিল। নিশি বলিতে লাগিল, “তাই বলিতেছিলাম, এই বেলা ঘুমাইয়া লও—আর রাত্রের মুখ দেখিবে না। নৌকা কোথ। যাইতেছে, বল দেখি ?” হরবল্লভের কথা কহিবার শক্তি নাই । নিশি বলিতে লাগিল, “ডাকিনীর শ্মশান বলিয়া এক প্রকাণ্ড শ্মশান আছে । আমরা যাহাদের প্রাণে মারি, তাহাদের সেইখানে লইয়া গিয়া মারি । বজরা এখন সেইখানে যাইতেছে। সেইখানে পৌছিলে সাহেব ফঁাসি যাইবে, রাণীজির হুকুম হইয়া গিয়াছে । আর তোমার কি হুকুম হইয়াছে জান ?” হরবল্লভ কঁাদিতে লাগিল—ষোড়হাত করিয়া বলিল, “আমায় রক্ষা কর।” নিশি বলিল, “তোমায় রক্ষা করিবে, এমন পাষণ্ড পামর কে আছে ? তোমায় শূলে দিবার হুকুম হইয়াছে।” হরবল্লভ ফুকারিয়া কাদিয়া উঠিল । ঝড়ের শব্দ বড় প্রবল ; সে কান্নার শব্দ ব্রজেশ্বর শুনিতে পাইল ন!—দেবীও না । সাহেব শুনিল । সাহেব কথাগুলি শুনিতে পায় নাই, কান্না শুনিতে পাইল । সাহেব ধমকাইল, “রোও মৎ—উল্লুক। মরণা এক রোজ আলবৎ হ্যায় ।” সে কথা কানে না তুলিয়া নিশির কাছে যোড়হাত করিয়া বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ র্কাদিতে লাগিল । বলিল, “ছা গ৷ ! আমায় কি কেউ রক্ষা করিতে পারে না গা ?” নিশি । তোমার মত নরাধমকে বাচাইয়া কে পাতকগ্ৰস্ত হুইবে ? অামাদের রাণী দয়াময়ী, কিন্তু তোমার জন্য কেহই তার কাছে দয়ার ভিক্ষা করিবে না । হর । আমি লক্ষ টাকা দিব । নিশি । মুখে আনিতে লজ্জা করে না ? পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য এই কৃতন্ত্রের কাজ করিয়াছ— আবার লক্ষ টাকা ইকি ? হর। আমাকে যা বলিবে, তাই করিব । নিশি। তোমার মত লোকের দ্বারা কোম্ কাজ হয় যে, তুমি যা বলিবে, তাই করিবে ? হর । অতি ক্ষুদ্রের দ্বারাও উপকার হয়—ও গে, কি করিতে হইবে বল, আমি প্রাণপণ করিয়া করিব—জামায় বাচাও ।