পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আনন্দমঠ মছে ৷ সকলেই বলে, তাই । মঠের অধিকারীদিগকে রাজা সম্বোধন করিতে হয় । আমার কন্য কোথায় মহারাজ ? সত্য । তা শুনিবার আগে, একটা কথার স্বরূপ উত্তর দাও । তুমি সস্তানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিবে ? মহে । তাহ নিশ্চিত মনে মনে স্থির করিয়াছি । সত্য । তবে কন্যা কোথায় শুনিতে চাহিও न । মহে । কেন মহারাজ ? সত্য । যে এ ব্রত গ্রহণ করে, তাহার স্ত্রী, পুল, কন্যা, স্বজনবর্গ কাহারও সঙ্গে সম্বন্ধ রাখিতে নাই । গ্রী, পুত্র, কন্যার মূখ দেখিলেও প্রায়শ্চিত্ত অাছে । যত দিন না সস্তানের মানস সিদ্ধ হয়, তত দিন তুমি কন্যার মুখ দেখিতে পাইবে না । অতএব যদি সন্তান-ধৰ্ম্ম-গ্ৰহণ স্থির হইয়া থাকে, তবে কন্যার সন্ধান জানিয়া কি করবে, দেখিতে ভ পাইবে না । মহে । এ কঠিন নিয়ম কেন প্রভু ? সত্য । সন্তানের কাজ অতি কঠিন কাজ । যে সৰ্ব্বত্যাগী, সে ভিন্ন অপর কেহ এ কাজের উপযুক্ত নহে। মায়ারজুতে যাঙ্গর চিত্ত বদ্ধ থাকে, লকে বাধা ঘুড়ির মত সে কখন মাট ছাড়িয়া স্বর্গে উঠিতে পারে ন! । মহে। মহারাজ, কথ: ভাল বুঝিতে পারিলাম না । যে স্ত্রী পুত্রের মুখদর্শন করে, সে কি কোন গুরুতর কার্য্যের অধিকারী নহে ? সত্য , পুল্ল কলরের মুখ দেখিলেই আমরা দেবতার কাজ ভুলিয়। যাই । সস্তান ধৰ্ম্মের নিয়ম এই যে, যে দিন প্রয়োজন হুইবে, সেই দিন সন্তানকে প্রাণত্যাগ করিতে হইবে । তোমার কন্যার মুখ মনে পড়িলে তুমি কি তাহাকে রাখিয়া মরিতে পারিবে ? মহে। তা না দেখিলেই কি কন্যাকে ভুলিব ? সত্য । না ভুলিতে পার, এ রত গ্রহণ করিও না ; মহে । সস্তানমাত্রেই কি এইরূপ পুত্ৰকলাত্ৰকে বিস্তৃত হইয়া ব্রত গ্রহণ করিয়াছে ? তাহা হইলে সস্তানেরা সংখ্যায় অতি অল্প । সুত্য। সস্তান দ্বিবিধ ; দক্ষিত, আর অদীক্ষিত । যাহার অদীক্ষিত, তাহার সংসারী বা ভিখারী। তাহার কেবল যুদ্ধের সময় আসিয়া উপস্থিত হয়, লুঠের ভাগ বা অন্য পুরস্কার পাইয়া চলিয়। যায়। যাহারা দীক্ষিত, তাহারা সৰ্ব্বত্যাগী । তাহারা সম্প্রদায়ের কর্তা । তোমাকে অদীক্ষিত সস্তান হইতে অনুরোধ করি না, যুদ্ধের জন্ত লাঠি সড়কীওয়ালা (EG : অনেক আছে। দীক্ষিত না হইলে তুমি সম্প্রদায়ের কোন গুরুতর কার্য্যে অধিকারী হইবে না । মহে । দীক্ষা কি ? দীক্ষিত হইতে হুইবে কেন শিক আমি ত ইতিপূৰ্ব্বেষ্ট মন্ত্রগ্রহণ করিয়াছি। সত্য । সে মন্ত্র ত্যাগ করিতে হইবে । অামার নিকট পুনৰ্ব্বার মন্ত্র লষ্টতে হইবে । يَةَ مت মহে । মন্ত্র ত্যাগ করিব কি প্রকারে ? ** সত্য । আমি সে পদ্ধতি বলিয়া দিতেছি । মহে । নূতন মন্ত্ৰ লইতে হুইবে কেন ? সত্য ! সন্তানের বৈষ্ণল । মহে । ইহা বুঝিতে পারি না । সস্তানেরা বৈষ্ণর কেন ? বৈষ্ণবের অহিংসাষ্ট পরম ধৰ্ম্ম । সত্য । সে চৈতন্ত্যদেবের বৈষ্ণব । নাস্তিক বৌদ্ধধৰ্ম্মের অনুকরণে যে প্রকত বৈষ্ণবতী উৎপন্ন হইয়াছিল, এ তাহারই লক্ষণ । প্রকৃত বৈষ্ণবধৰ্ম্মেব লক্ষণ ষ্টের দমন, ধরিত্রীর উদ্ধার । কেন না, বিষ্ণুই সংসারের পালনকৰ্ত্ত ; দশ বার শরীরধারণ করিয়া পৃথিবী উদ্ধার করিয়াছেন। কেশী, হিরণ্যকশিপু, মধু কৈটভমুর,নরক প্রভৃতি দৈত্যগণকে, রাবণাদি রাক্ষসগণকে, কংস, শিশুপাল প্রভৃতি রাজগণকে তিনিই যুদ্ধে ধ্বংস করিয়াছিলেন । তিনিই জেতা, জয়দাতা, পৃথিবীর উদ্ধারকর্ত, আর সস্তানের ইষ্টদেবতা । চৈতন্যদেবের বৈষ্ণবধৰ্ম্ম প্রকত বৈষ্ণবধৰ্ম্ম নহে—উহ অৰ্দ্ধেক ধৰ্ম্মমাত্র । চৈতন্যদেবের বিষ্ণু প্রেমময় – কিন্তু ভগবান কেবল প্রেমময় নহেন—তিনি অনন্তশক্তিময়। চৈতন্যদেবের বিষ্ণু শুধু প্রেমময়—সন্তানের বিষ্ণু শুধু শক্তিময় । আমরা উভয়েই বৈষ্ণব—কিন্তু উভয়েই অৰ্দ্ধেক বৈষ্ণব ! কথাটা বুঝিলে ? মহে । না । এ যে কেমন নুতন নুতন কথা শুনিতেছি । কাশিমবাজারে একটা পাদরীর সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছিল –সে ঐ রকম কথা সকল বলিল --অর্থাৎ ঈশ্বর প্রেমময়—তোমরা যীশুকে প্রেম কর—এ যে সেই রকম কথা । সত) । যে রকম কথা আমাদিগের চতুর্দশ পুরুষ বুঝিয়া আসিতেছেন, সেই রকম কথায় আমি তোমায় বুঝাইতেছি। ঈশ্বর ত্রিগুণাত্মক, তাহ শুনিয়াছ ? মহে । ইঁ, সত্ত্ব, রজঃ, তমঃ—এই তিন গুণ । সত্য। ভাল। এই তিনটি গুণের পৃথকৃ পৃথকৃ উপাসনা । সত্ত্বগুণ হইতে র্তাহার দয়াদাক্ষিণাদির উৎপত্তি। তাহার উপাসনা ভক্তির দ্বারা করিবে । চৈতন্তের সম্প্রদায় তাহা করে । রজোগুণ হইতে তাহার শক্তির উৎপত্তি ; ইহার উপাসনা যুদ্ধের দ্বারা —দেবদ্বেষীদিগের নিধন দ্বারা—আমরা আহা করি ।