পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

r* .. (t8 - ਾਂ - ‘‘ہیے একাদশ পরিচ্ছেদ এমন সময়ে টমাসের তোপগুলি দক্ষিণে আসিয়া পৌছিল। তখন সস্তানের দল একেবারে ছিন্ন-ভিন্ন হইল, কেহ বাচিবার আর কোর্ন আশ। রহিল না । সন্তানেরা যে যেখানে পারিল, পলাইতে লাগিল । জীবানন্দ ধীরানন্দ তাহাদিগকে সংযত এবং একত্রিত করিবার জন্য অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কিছুতেই পারিলেন না । সেই সময়ে উচ্চৈঃশব্দ হইল, “পুলে যাও, পুলে যাও, ওপার যাও । নহিলে নদীতে ডুবিয়া মরিবে, ধীরে ধীরে ইংরেজ সেনার দিকে মুখ রাথিয় পুলে যাও ।” জীবানন্দ চাহিয়া দেখিলেন, সম্মুখে ভবানন্দ । ভবানন্দ বলিলেন, “জীবানন্দ ! পুলে লইয়। যা ৪, রক্ষা নাই ।” তখন ধীরে ধীরে পিছে হটিতে হটিতে সন্তান সেনা পুলের পারে চলিল। কিন্তু পুল পাইয়া, বছসংখ্যক সন্তান একেবারে পুলের ভিতর প্রবেশ করায় ইংরেজের তোপ সুযোগ পাইয় পুল একেবারে ঝ টাইতে লাগিল । সস্তানের দল বিনষ্ট হইতে লাগিল । ভবানন্দ, জীবানন্দ, ধীরানন্দ, একত্র । একটা তোপের দৌরাত্ম্যে ভয়ানক সন্তানক্ষয় হইতে ছিল। ভবানন্দ বলিলেন, “জীবানন্দ, ধারানন্দ, এস, শুরবারি ঘুরাইয়া আমরা তিন জন এই তোপট 'দখল করি ।” তখন তিন জনে তরবারি ঘুরাইয়। সেই তোপের নিকটবৰ্ত্তী গোলন্দাজ সেনা বপ করিলেন । তখন আর আর সস্তানগণ র্তাহাদের সাহায্যে আসিল । তোপট। ভবানন্দের দখল হইল । তোপ দখল করিয়া ভবানন্দ তাহার উপর উঠিয়৷ দাড়াইলেন । করতালি দিয়া বলিলেন, “বল বন্দে মাতরম্ !” সকলে গায়িল, “বন্দে মাতরম্ " ভবানন্দ বলিলেন, “জীবানন্দ, এই তোপ ঘুরাইয়া বেটাদের লুচির ময়দা তৈয়ার করি।” সন্তানের সকলে ধরিত্র। তোপ ঘুরাইল । তখন তোপ উচ্চনাদে বৈষ্ণবের কৰ্ণে যেন হরি শব্দে ডাকিতে লাগিল । বহুতর সিপাহী তাহাতে মরিতে লাগিল । ভবানন্দ সেই তোপ টানিয়া পুলের মুখে স্থাপন করিয়া বলিলেন, “তোমরা দুই জনে সন্তান-সেনা সারি দিরা পুল পর করিয়া লইয়া যাও, আমি এক বাহমুখ রক্ষা করিব —তোপ চালাইবার জন্য আমার কাছে কয় জন গোলন্দাজ দিয়া যাও ” কুড়ি জন বাছা সন্তান ভবানন্দের কাছে রহিল । তখন অসংখ্য সস্তান পুল পার হইয়া জীবানন্দ ও ধীয়ানদের আজ্ঞাক্ৰমে সারি দিয়া পরপারে যাইতে লাগিল। এক ভবানন্দ কুড়ি জন সস্তানের সাহায্যে সেই এক কামানে বহুতর সেনা নিহত করিতে লাগিলেন–কিন্তু ষবন সেনা জলোচ্ছ্বাসোথিত তরঙ্গের ন্যায় ! তরঙ্গের উপর তরঙ্গ, তরঙ্গের পর তরঙ্গ – ভবানন্দকে সংবেষ্টিত, উৎপীড়িত নিমগ্নের ন্যায় করিয়া তুলিল । ভবানন্দ অশ্রাস্ত, অজেয়, নির্ভীকৃ— কামানের শব্দে শব্দে কতই সেনা বিনষ্ট করিতে লাগিলেন । যবন বাত্যাপীড়িত তরঙ্গাভিঘাতের ন্যায় তাহার উপর আক্রমণ করিতে লাগিল, কিন্তু কুড়ি জন সস্তান তোপ লইয়া পুলের মুখ বন্ধ করিয়া রহিল । তাহারা মরিয়াও মরে না—যবন পুলে ঢুকিতে পায় না । সে ধীরের অজেয়, সে জীবন অবিনশ্বর । অবসর পাইয়া দলে দলে সন্তানসেন অপর পারে গেল । আর কিছু কাল পুল রক্ষা করিতে পারিলেই সন্তানের সকলেষ্ট পুলের পারে যায় —এমন সময়ে কোথ! হইতে নুতন তোপ ডাকিল— “গুডুম্‌ গুম্‌ বুম্‌ বুম্ " উভয় দল কিয়ৎক্ষণ যুদ্ধে ক্ষাস্ত হুইয়া চাহিয়া দেখিল—কোথায় আবার কামান ! দেখিল, বনের ভিতর হইতে কতকগুলি কামান দেশী গোলন্দাজ কর্তৃক চালিত হইয়। নির্গত হইতেছে । নির্গত হইয়। সেই বিরাট কামানের শ্রেণী সপ্তদশ মুখে পূম উদগণ করিয়া হে সাহেবের দলের উপরে অগ্নিবৃষ্টি করিল । ঘোর শব্দে বন, গিরি সকলই প্রতিপবনিত হইল । সমস্ত দিনের রণে ক্লান্ত যবনসেন। প্রাণভয়ে শিঙ্গরিল । অগ্নিবৃষ্টিতে তৈলঙ্গা, মুসলমান, হিন্দুস্তানী পলায়ন করিতে লাগিল । কেবল দুষ্ট চারি জন গোর খাড় দাড়াইয়। মরিতে লাগিল । ভবানন্দ রঙ্গ দেখিতেছেন । ভবানন্দ বলিলেন,"ভাই, নেড়ে ভাগিতেছে, চল, একবার উহাদিগকে আক্রমণ করি।” তখন পিপীলিকা-স্রোতেীবৎ সস্তানের দল নূতন উৎসাহে পুল পারে ফিরিয়৷ আসিলা যবনদিগকে আক্রমণ করিতে ধাবমান হইল । অকস্মাং তাহারা যবনের উপর পড়িল । ঘবন সদ্ধের আর অবকাশ পাইল না—যেমন ভাগীরথী-তরঙ্গ সেই দন্তকারী বৃহং পৰ্ব্বতাকার মত্ত হস্তকে ভাসাইয়ু লইয়া গিয়াছিল, সন্তানের তেমনি যবনদিগকে ভাসাইয়া লইয়া চলিল । যবনেরা দেখিল, পিছনে , ভবানন্দের পদতিক সেন, সম্মুখে মহেন্দ্রের কামান । তখন হে সাহেবের সর্বনাশ উপস্থিত হইল। আর কিছু টিকিল না—বল, বীর্য্য, সাহস, কৌশল, শিক্ষা, দস্তু, সকলই ভাসিয়া গেল । ফৌজদারী, বাদশাহী, ইংরেজী, দেশী, বিলাতী কাল, গোরা সৈন্য নিপতিত হইয়া ভূতলশাস্ত্রী