পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* સ્ક ছায়। রমণীরূপলাবণ্য । ইহসংসারে তোমাকেই ধিক্ । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

  1. ,

রণজয়ের পর, অজয়তীরে সত্যানন্দকে ঘিরিয়া বিজয়ী বীরবর্গ নানা উৎসব করিতে লাগিল । কেবল ,সত্যাননা বিমর্ষ, ভবানন্দের জন্য । এতক্ষণ বৈষ্ণবদিগের রণবাদ্য অধিক ছিল না, কিন্তু সেই সময় কোথা হইতে সহস্ৰ সহস্র কড়ানাগর, ঢাকঢোল, কঁাসি, সানাই, তুরীভেরী, রামশিঙ্গা, দামাম আসিয়া জুটিল। জয়স্থচক বাদ্যে কানন, প্রাস্তর, নদীসকল শব্দ ও প্রতিধ্বনিতে fপরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। এইরূপে সন্তানগণ অনেকক্ষণ ধরিয়া নানারূপ উৎসব করিলে পর সত্যানন্দ বলিলেন, “জগদীশ্বর আজ কৃপা করিয়াছেন, সস্তানধৰ্ম্মের জয় হইয়াছে ; কিন্তু এক কাজ বাকী আছে । যাহার আমাদিগের সঙ্গে উৎসব করিতে পাইল না, যাহার। আমাদের উৎসবের জন্য প্রাণ দিয়াছে, তাহাদিগকে ভুলিলে চলিবে না। যাহার রণক্ষেত্রে নিহত হইয়া পড়িয়া আছে, চল যাই, আমরা গিয়া তাহাদের সৎকার করি । বিশেষ, যে মহাত্ম। আমাদিগের জন্য

  • এই রণজয় করিয়া প্রাণত্যাগ করিয়াছেন, চল মহান

g § উৎসব করিয়৷ সেই ভবানন্দের সংকার করি।” তখন :সন্তানদল “বুন্দে মাতরম্ বলিতে বলিতে নিহত দিগের সৎকারে চলিল। বহুলোক একত্রিত হইয়। হরিবোল দিতে দিতে ভারে ভারে চন্দনকাষ্ঠ, বহিয়া আনিয়া ভবানন্দের চিত রচনা করিল এবং তাঁহাতে ভবানন্দকে শায়িত করিয়া অগ্নি জালিত করিয়৷ চিত বেড়িয়া বেড়িয়া “হরে মুরারে” লাগিল। ইহারা বিষ্ণুভক্ত, গায়িতে বৈষ্ণবসম্প্রদায়ভুক্ত নহে ; অতএব দাহ করে । কাননমধ্যে তৎপরে কেবল সত্যানন্দ, জীবানন্দ, মহেন্দ্র, নবীনানন্দ, ধারানন্দ আসীন ; গোপনে পাচ জনে পরামর্শ করিতেছেন । সত্যানন বলিলেন, “এত দিন যে জন্য আমরা সৰ্ব্ব কৰ্ম্ম, সৰ্ব্ব-ধৰ্ম্ম- সৰ্ব্ব মুখ ত্যাগ করিয়াছিলাম, সেই ব্ৰত সফল হইয়াছে, এ প্রদেশে যবনসেন আর নাই, যাহ অবশিষ্ট আছে, এক দণ্ড আমাদিগের নিকট টিকিবে না, তোমরা এখন কি পরামর্শ দাও ?” জীবানন্দ বলিলেন, “চলুন, এই সময়ে গিয়া রাজধানী অধিকার করি ” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী সত্য। আমারও সেই মত । ধীর। সৈন্য কোথায় ? জীব। কেন, এই সৈন্ত । ধীর । এই সৈন্ত কই ? কাহাকে দেখিতে পাইতেছেন ? জীব । স্থানে স্থানে সব বিশ্রাম করিতেছে, ডঙ্কা দিলে অবশু পাওয়া যাইবে । ধীর । এক জনকেও পাইবেন না । সত্য । কেন ? ধীর। সবাই লুঠিতে বাহির হইয়াছে । গ্রাম সকল এখন অরক্ষিত । মুসলমানের গ্রাম আর রেশমের কুঠী লুঠিয়া সকলে ঘরে যাইবে । এখন কাহাকেও পাইবেন না, আমি খুজিয়া আসিয়াছি। সত্যানন্দ বিষণ্ণ ; বলিলেন, “যাই হউক, এ প্রদেশ সমস্ত আমাদিগের অধিকৃত হইল। এখানে আর কেহ নাই মে, আমাদের প্রতিদ্বন্দী হয় । অতএব বরেন্দ্রভূমিতে ভোমরা সন্তান রাজ্য প্রচার কর । প্রজাদিগের নিকট হইতে কর আদায় কর এবং নগর অধিকার করিবার জন্য সেন সংগ্রহ কর । হিন্দুর রাজ্য হইয়াছে শুনিলে, বহুতর সেনা সস্তানেৰ নিশান উড়াইবে ।" তখন জীবানন্দ প্রভৃতি সত্যাননীকে প্রণাম করিয়া বলিলেন, “আমরা প্রণাম করিতেছি—হে মহারাজাধিরাজ ! আজ্ঞ হয় ত আমরা এই কাননেই আপনার সিংহাসন স্থাপিত করি।" সত্যানন্দ তাহার জীবনে এই প্রথম কোপ প্রকাশ করিলেন । বলিলেন, “ছি! আমায় কি শূন্তকুম্ভ মনে কর ? আমরা কেহ রাজা নহি—আমরা সন্ন্যাসী । এখন দেশের রাজা বৈকুণ্ঠনাথ স্বয়ং। নগর অধিকার হইলে যাহার শিরে তোমাদিগের ইচ্ছ। হয়, রাজ-মুকুট পরাইও, কিন্তু ইহা নিশ্চিত জানিও যে, আমি এই ব্ৰহ্মচৰ্য্য ভিন্ন আর কোন আশ্রমই স্বীকার করিব না। এক্ষণে তোমরা স্ব স্ব কৰ্ম্মে যাও ” তখন চারি জনে ব্রহ্মচারীকে প্রণাম করিয়া গাত্রোথনি করিলেন । সত্যনিন্দ তখন অন্তের অলক্ষিতে ইঙ্গিত করিয়৷ মহেন্দ্রকে রাখিলেন । আর তিন জন চলিয়া গেলেন, মহেন্দ্র রহিলেন । সত্যানন্দ তখন মহেন্দ্রকে বলিলেন, “তোমরা সকলে বিষ্ণু মণ্ডপে শপথ করিয়া সস্তানধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছিলে। ভবানন্দ ও জীবানন্দ দুই জনেই প্রতিজ্ঞাভঙ্গ করিয়াছে । ভবানন্দ আজ তাহার স্বীকৃত প্রায়শ্চিত্ত করিল। আমার সর্বদা ভয়, কোন