পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

కాక్షాకfఇsస్త్ర প্রথম পরিচ্ছেদ সেই বুজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণ হইল। সস্তানের দলে দলে বেখানে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কেহ “বন্দে মাতরম্ কেহু “জগদীশ হরে” বলিয়া গায়িয় বেড়াইতে লাগিল । কেহ শক্রসেনার অস্ত্র, কেহ বস্ত্র অপহরণ করিতে লাগিল । কেহ মৃতদেহের মুখে পদাঘাত কেহ অঙ্গপ্রকার উপদ্রব করিতে লাগিল । কেহ গ্রামাভিমূখে, কেহ ব৷ নগরাভিমুখে ধাবমান হইয়। পথিক বা গৃহস্থকে ধরিয়া বলে, “বল বন্দে মাতরম্ নহিলে মাবিদ। ফেলিব ।” কেহ মন্ত্ররার দোকান লুঠিযা খায়, কে গোস্লালাব বাড়ী গিয়া হঁাড়ি পাড়িয়া দধিতে চুমুক মারে । কেহু বলে, “আমরা বজগোপ আসিয়াছি, গোপিনী কই ?” সেই এক রাত্রের মধ্যে গ্রামে গ্রামে, নগরে নগরে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল । সকলে বলিল, “মুসলমান পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে। সকলে একবার মুক্তকণ্ঠে হরি হবি বল!" গ্রাম লোকের মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়। মারিতে যায় । কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়। মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সৰ্ব্বস্ব লুঠিয়। লষ্টতে লাগিল । অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিদ। গায়ে মুক্তিক মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল। জিজ্ঞাস করিলে বলিতে লাগিল, “মুই ঠেঙ্গ " দলে দলে ত্রস্ত মুসলমানের নগরাভিমুখে পাবিত হইল । চারিদিকে রাজপুরুষেরা ছুটিল, অবশিষ্ট সিপাহী সুসজ্জিত হইয়। নগররক্ষার্থে শ্রেণীবদ্ধ হইল : নগরের গড়ের ঘাটে ঘাটে প্রকোষ্ঠ-সকলে রক্ষকবর্গ সশস্ত্রে অতি সাবধানে দ্বাররক্ষায় নিযুক্ত হইল । সমস্ত লোক সমস্ত রাত্রি জাগরণ করিয়া, কি, হয় কি হয়, চিন্তা করিতে লাগিল ; হিন্দুরা বলিতে লাগিল, “আসুক, সন্ন্যাসীরা আস্থক, মা দুর্গ করুন, হিন্দুর অদৃষ্টে সেই দিন হউক ।” মুসলমানের বলিতে লাগিল, “আল্লা আকৃবর ! এত না রোজের পর কোরাণসরিফ বেবাক কি ঝুটাে হলো, মোরা যে পাচু ওয়াক্ত নমাজ করি, তা এই তেলককাটা ষ্টেন্দুর দল ক্ষতে কবৃতে নাবৃলাম। দুনিয়ার সব ফাকি ৷” এইরূপে কেহ ক্ৰন্দন, কেহ হাস্ত করিয়া সকলেই ঘোরতর আগ্রহের সহিত রাত্রি কাটাইতে লাগিল। এ সকল কথা কল্যাণীর কানে গেল, আবালবৃদ্ধবনিভ। কাহারও অবিদিত ছিল না । কল্যাণী মনে মনে বলিলেন, “জয় জগদীশ্বর ! আজি তোমার কাৰ্য্য সিদ্ধ হইয়াছে । আজ আমি স্বামিসন্দর্শনে যারা করিব । হে মধুসূদন । আজ আমার সহায় হও ।” গভীর রাত্রে কল্যাণী শস্য ত্যাগ করিয়া, উঠিয়া এক খিড়কির দ্বার খলিরা, এদিক ওদিক চাহিয়া, কাহাকে কোথাও না দেখিয় ধীরে ধীরে নিঃশব্দে গেীরাদেবীর পুরা হইতে রাজপথে নিক্রোস্তু হইলেন । মনে মনে ইষ্টদেবত। স্মরণ করিয়৷ বলিলেন, “দেখ ঠাকুর, আজ যেন পদচিহ্নে তার সাক্ষাৎ পাই o কল্যাণী নগরের চটিতে আসিয়া উপস্থিত। পাহারা ওয়াল বলিল, “কে যায় ?” কল্যাণী ভীত-স্বরে বলিলেন, “আমি স্ত্রীলোক ” পাহারাওয়াল বলিল, “মাবার হুকুম নাই ।” কথা দফাদারের কানে গেল । দফাদার বলিল, “বাহিরে সাইবার নিষেধ নাই, ভিতরে আসিবার নিষেধ ।" শুনিম। পাহারাওয়ালা কল্যাণকে বলিল, “সাও মায়ি, ঘাবার মানা নাই, লেকেন অাজক। রাতমে বড় আফত, কেয়ী জানে, মায়ি, তোমার কি হোবে, তুমি কি ডেকেতের হাতে গিৰ্ববে, কি খানায় পড়িয়া মরিয়া যাবে, সে তো হাম কিছু জ্ঞানে না । আজকা রাত মায়ি তুমি বাহার না ধাবে ।” কল্যাণী বলিলেন, “বাবা, আমি ভিখারিণী— আমার এক কড়া কপর্দক নই, আমায় ডাকাতে কিছু বলিবে না ।” পাহারাওয়াল বলিল, “বয়স আছে, মায়ি বয়স আছে, দুনিয়ামে ওহি তো জেওরাত হায় । বলুকে হাম ডেকেত হতে পারে।” কল্যাণী দেখিলেন, বড় বিপদ, কিছু কথা না কহিয়া ধীরে ধীরে ঘাটি এড়াইয়। চলিয়া গেলেন । পাহারাওয়ালা দেখিল, মায়ি রসিকতাটা বুঝিল না, তখন মনের দুঃখে গাজায় দম্ মারিয়া বিবিটি খাম্বাজে সোরির টপ্পা ধরিল । কল্যাণী চলিয়া গেল ।