পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে রাত্রে পথে দলে দলে পথিক, কেহ মার মার শব্দ করিতেছে, কেহ পালাও পালাও শব্দ করিতেছে, কেহ কঁাদিতেছে, কেহ হাসিতেছে, যে যাহাকে দেখিতেছে, সে তাহাকে ধরিতে যাইতেছে । কল্যাণী অতিশয় কষ্টে পড়িলেন । পথ মনে নাই, কাহাকে জিজ্ঞাসা করিবার যে নাই, সকলে রণোন্মুখ । কেবল লুকাইয়া লুকাইয়া অন্ধকারে পথ চলিতে হইতেছে । লুকাইয়া লুকাইয়। যাইস্তেও এক দল অতি উদ্ধত বিদ্রোহীর হাতে সে পড়িয়া গেল । তাহার ঘোর চীৎকার করিয়৷ তাঙ্গকে পরিতে তাসিল । কল্যাণী তখন উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করি। জঙ্গলমপ্যে প্রবেশ করিলেন । সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দ্যই এক জন দস্তু। র্তাহার পশ্চাতে ধাবিত হইল । এক জন ঠাণ্ডাল অঞ্চল ধরিল ; বলিল, “তবে চাদ !” সেই সমন আর এক জন অকস্মাৎ অসিং| অত্যাচ1রকারী পুরুষকে এক ঘ লাঠি মারিল । সে তাঙ্গত হইয়। পাছু হটিয়া গেল । এই ব্যক্তির সরাসীর বেশ - কৃষ্ণাজিনে বক্ষ আবু হ, বয়স আতি অল্প । সে কলা ণীকে বলিল, “তুমি ভয় করি ও না, আমার সঙ্গে আইস-—কেথায় মাঈবে ?" ক ! পদটিতে ; আগস্তুক বিঘ্নিত ও চমকিত হঈল : বলিল, “সে কি ? –পদচিহ্নে ?" এই বলিয়৷ আগম্বুক কল্য|শীর দুই স্কন্ধে হস্তস্থাপন করিয়৷ মুখপানে সেই অন্ধ কারে অতি সূত্বের সহিত শিরক্ষণ করিতে লাগিল কল্যাণী অকস্মাৎ পুরুধম্পর্শে রোমাঞ্চিত, ভাত, ক্ষুব্ধ, বিক্ষিত, অশ্রবিপ্লুত হইলেন -এমন সাপ নাই যে, পলায়ন করেন, ভাতিবিহবলা হইয়। গিয়াছিলেন । আগন্তুকের নিরীক্ষণ শেখ হইলে সে বলিল, “হরে মুরারে । চিনেছি যে, তুমি পোড়ারমুখী কল্যাণী !” কল্যাণী ভীত হইল! জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি কে ?” আগন্তুক বলিল, “আমি তোমার দাসানুদাস– হে মুন্দরি ! আমার প্রতি প্রসন্ন হও ।” কল্যাণী অতি দ্রুতবেগে সেখান হইতে সরিয়। তর্জন-গর্জন করিমু! বলিলেন, “এই অপমান করিবার জন্যই কি আপনি আমাকে রক্ষা করিলেন ? দেখিতেছি, ব্রহ্মচারীর বেশ, ব্রহ্মচারীর কি এই ধৰ্ম্ম ? আমি আজি নিঃসহায়, নইলে তোমার মুখে আমি লাথি মারিতাম !" ব্ৰহ্মচারী বলিল “অয়ি স্মিতবদনে ! আমি বহু দিবসাবধি তোমার ঐ বরবপুর স্পর্শ কামনা করিতেছি।” এই বলিয়া ব্ৰহ্মচারী দ্রুতবেগে ধাবমান &సి 緊

    • . 3. **

ইষ্টয় কল্যাণীকে ধরিয়। গাঢ় তালিঙ্গন করিল । " তখন কল্যাণী খিল্‌ খিল্‌ করিয়া হাসিলেন, বলিলেন, “ও আমার কপাল ! আগে বলতে হয় ভাই যে, আমারও ঐ দশ " শান্তি বলিল, “ভাই, মহেন্দ্রের খোজে চলিয়াছ ?” কল্যাণী বললেন, “তুমি কে ? তুমি যে সব জন দেখিতেছি ।" শাস্তি বলিল, “সমি পহ্মচারী—সন্তানসেনার অধিনায়ক -ঘোরতর বীরপুরুষ ! আমি সব জানি । আজ পথে সিপাঠী আর সস্তানের সে দেীবাত্ম, তুমি আজ পদটিক্সে স্বাক্টতে পরিবে না ।" কল্যাণী কাদিতে লাগিলেন শান্তি চোখ ঘুরাইশ। বলিল, “ভদ্র কি ? আমরা মানবাণে সংস্র শত্রু বপ করি । চল, পদচিহ্নে যাই ।” কল্যাণী এরূপ পদ্ধিমন্ত্রী স্ত্রীলোকের সহায়তা পাইয় যেন হাত বাড়াইল্লা স্বর্গ পাইলেন । বলিলেন, “তুমি যেখানে লইয়! সাইলে, সেইখানেই যাইব ।” শাস্তি তখন তাকে সঙ্গে করিম বন্যপথে লষ্টয় চলিল । দ্বিতাস পরিচ্ছেদ যখন শান্তি আপন আশ্রম ত্যাগ করিয়া গভীর রাত্রে নগরাভিমূখে যাত্রা কবে, তখন জীবানন্দ আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন । নগরে চলিলাম । মহেন্দ্রের স্ত্রীকে লইয়া আসিব । তুমি মহেন্দ্রকে বলিয়া রাখ যে, উহার স্ত্রী আছে ।” জীবানন্দ ভবানন্দের কাছে কল্যাণীর জীবনরক্ষাবৃত্তাস্তু সকল অবগত হইয়াছিলেন—এবং তাহার বর্তমান বাসস্থানও সৰ্ব্বস্থানবিচারিণী শাস্তির কাছে শুনিয়াছিলেন । ক্রমে ক্রমে সকল মহেন্দ্রকে শুনাইতে লাগিলেন । মহেন্দ্র প্রথমে বিশ্বাস করিলেন না । আনন্দে অভিভূত ইষ্টয়া মুগ্ধপ্রায় হইলেন । শেষে শান্তি জীবনন্দকে বলিল, “আমি । সেই রজনী প্রভাতে শাস্তির সাহায্যে মহেঞ্জের : সঙ্গে কল্যাণীর সাক্ষাৎ হইল । নিস্তব্ধ কাননমধ্যে : ঘন-বিন্যস্ত শালতরুশ্রেণীর অন্ধকারচ্ছায়ামধ্যে, পশু : পক্ষী ভগ্ননিদ্র হইবার পূৰ্ব্বে তাহাদিগের পরস্পরের : দর্শনলাভ হইল । সাক্ষী কেবল সেই নীলগগনবিহারী; স্নানকিরণ আকাশের নক্ষত্ৰচয় আর সেই নিষ্কম্প * অনন্ত শালতরুশ্রেণী । দুরে কোন শিলাসংঘর্ষণনাদিনী, মধুরকল্লোলিনী সংকীর্ণ নদীর তরতর শব্দ, কোথাও .