পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

' এৈ কথা আমি তোমাকে সেইরূপ বুঝাই, মনোযোগ দিয়া শুন । তেত্রিশ কোটি দেবতার পূজা সনাতনধৰ্ম্ম নহে, সে একট। লৌকিক অপকৃষ্ট ধৰ্ম্ম ; তাহার প্রভাবে প্রকৃত সনাতনধৰ্ম্ম—স্নেচ্ছের যাহাকে হিন্দুধৰ্ম্ম বলে—তাহা লোপ পাইয়ূtছে। প্রকৃত হিন্দুধৰ্ম্ম জ্ঞানাত্মক —কৰ্ম্মাত্মক নহে । সেই জ্ঞান দুই প্রকার ; —বহিৰ্ব্বিযয়ক ও অন্তৰ্ব্বিযমুক । অন্তৰ্ব্বিষয়ক যে জ্ঞান, সেই সনাতন ধৰ্ম্মের প্রধান ভাগ । কিন্তু বহিৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞান আগে না জন্মিলে অন্তৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞান জন্মিবার সম্ভাবন নাই । স্থল কি, তাং ন জামিলে সূক্ষ্ম কি, তাহ জানা যায় না । এখন এ দেশে অনেক দিন হইতে বহিৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞান বিলুপ্ত হইয়। গিয়াছে—কাজেই প্রকৃত সনাতনধৰ্ম্মও লোপ পাইয়াছে সনাতনধৰ্ম্মের পুনরুদ্ধার করিতে গেলে, আগে বহির্বিযয়ক জ্ঞানের প্রচার করা তাবস্তক । এখন এ দেশে বহিৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞান নাই—শিখায়, এমন লোক নাই ; আমির লোকশিক্ষায় পটু নহি । অতএব ভিন্ন দেশ ইষ্টতে বহিৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞান ত্যানিতে হইবে । ইংরেজ বহিৰ্ব্বিষয়ক জ্ঞানে অতি সুপণ্ডিত, লোকশিক্ষায় বড় সুপটু । সুতরাং ইংরেজকে রাজা করিব । ইংরেজী শিক্ষায় এ দেশীর লোক বহিস্তত্ত্বে সুশিক্ষিত হইয়া অস্তস্তত্ব বুঝিতে সক্ষম হইবে । তখন সনাতনধৰ্ম্ম-প্রচারে আর বিপ্ন থাকিবে না । তথন প্রকৃত ধৰ্ম্ম আপনা-আপনি পুনরুদ্দীপ্ত হইবে । যত দিন তা ন হয়, যত দিন না হিন্দু আবার জ্ঞানবান, গুণবান আর বলবান হয়, তত দিন ইংরেজ রাজ্য অক্ষয় থাকিবে ; ইংরেজরাজ্যে প্রজা সুপা হইবে । নিষ্কণ্টকে ধৰ্ম্মাচরণ করিবে । অতএব হে বুদ্ধিমান —ইংরেজের সঙ্গে যুদ্ধে নিরস্ত হইয়া আমার অনুসরণ কর ।” সত্যানন্দ বলিলেন, “হে মহাত্মন্‌ ! যদি ইংরেজকে রাজ করাই আপনাদের অভিপ্রায়, যদি এ সময়ে ইংরেজের রাজ্যষ্ট দেশের পক্ষে মঙ্গলকর, তবে আমাদিগকে এই নৃশংস যুদ্ধকার্য্যে কেন নিযুক্ত করিয়াছিলেন ?” - মহাপুরুষ বলিলেন “ইংরেজ এক্ষণে বণিকৃ– অর্থসংগ্রহেই মন, রাজ্যশাসনের ভার লইতে চাহে శా বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী ন। এই সস্তানবিদ্রোহের কারণে, তাহার রাজ্য" শাসনের ভার লইতে বাধ্য হইবে ; কেন না, রাজ্যশাসন ব্যতীত অর্থ সংগ্ৰহ হইবে না। ইংরেজ রাজ্যে অভিষিক্ত হইবে বলিয়াই সস্তানবিদ্রোহ উপস্থিত হইয়াছে । এক্ষণে আইস,—জ্ঞানলাভ করিয়া তুমি স্বয়ং সকল কথ। বুঝিতে পারিবে ।” সত্যানন্দ । হে মহাত্মন্‌ ! আমি জ্ঞানলাভের আকাজক্ষণ রাখি ন!— জ্ঞানে আমার কাজ নাই— আমি যে ব্রতে ব্ৰতী হইয়াছি, ইহাই পালন করিব । আশীৰ্ব্বাদ করুন আমার মাতৃভক্তি অচলা হউক । ইiপুরুষ । ব্রত সফল হইয়াছে—মা’র মঙ্গলসাধন করিয়াছ - ইংরেজরাজ্য স্থাপিত করিপ্পাছ । যুদ্ধবিগ্ৰহ পরিত্যাগ কর, লোকে কৃষিকর্য্যে নিযুক্ত হউক, পুথিবী শস্তশালিনী হউক, লোকের শ্ৰীবৃদ্ধি হউক । সতানদের চক্ষু ইষ্টতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নির্গত হইল । তিনি বলিলেন, “শক্ৰশোণিতে সিক্ত করিয়া মাতাকে শস্ত্যশালিনী করিব ।” মহাপুরুষ । শক্র কে ? শক্র তার নাই । ইংরেজ মিত্ররাজ । আর ইংরেজের সঙ্গে সদ্ধে শেষ জমা হয়, এমন শক্তিও কাহারও নাই । সতানন্দ । না থাকে, এইখানে এই মাতৃপ্রতিমসম্মুখে দেহ ত্যাগ করিব । মহাপুরুষ । অজ্ঞানে ? চল, জ্ঞানলাভ করিবে চল । হিমালয়-শিখরে মাতৃমন্দির আছে, সেইখান হইতে মাতৃমূৰ্ত্তি দেখাইব । এই বলিয়। মহাপুরুষ সত্যানন্দের হাত ধরিলেন । কি অপূৰ্ব্ব শোভ ! সেই গম্ভীর বিষ্ণুমন্দিরে প্রকাণ্ড চতুভুজমূৰ্ত্তির সম্মুখে ক্ষণালোকে সেই মহা প্রতিভাপূর্ণ দুষ্ট পুরুনমূৰ্ত্তি শোভিত—একে —একে অন্যের হাত ধরিয়াছেন । কে কাহাকে ধরিয়াছে ? জ্ঞান আসিয়৷ ভক্তিকে ধরিয়াছে – ধৰ্ম্ম আসিয়া কৰ্ম্মকে ধরিয়াছে ; বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে ধরিয়াছে—কল্যাণী তাসিয়া শান্তিকে ধরিয়াছে । এই সত্যানন্দ শাস্তি ; এই মহাপুরুষ কল্যাণী । সত্যানন্দ প্রতিষ্ঠা, মহাপুরুষ বিসর্জন । বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে লইয়। গেল । আশচমাপ্ত